সান্তাহারে বাঙালীর অনেক ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ


আদমদীঘি প্রতিনিধি: বগুড়ার সান্তাহারে মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতিবিজরিত শহর। নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও রয়েছে এই শহরে। ১৯৭১ সালে প্রায় ২৫ হাজার বিহারির বসবাস ছিল এই শহরে। নানা রকম অত্যাচার করতো তারা বাঙালীদের ওপর। ১৯৭১ সালে মুত্তিযুদ্ধ শুরুর প্রক্কালে বিহারিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বাঙালী নিধন কার্যক্রম শুরু করে। শেষ পযর্ন্ত তাদের হত্যাযঙ্গে ভয়ে ভিত না হয়ে ঘুড়ে দাঁড়ায় বাঙালীরা। প্রান যায় উভয় পক্ষের লোকজনের। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকবাহিনী সান্তাহারে বিহারি হত্যা কান্ডের প্রতিশোধ হিসাবে ব্যাপক হত্যাযঙ্গ সংগঠিত করে। প্রান যায় সান্তাহারে অনেক হিন্দু, মুসলমান সহ নানা ধর্মের মানুষের। মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের জন্য একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের জন্য ২০১৫ সালে এগিয়ে আসে সান্তাহারে কতিপয় প্রগতিশীল তরুণ। অনেক স্মৃতি বিজরিত সান্তাহার শহরে রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ের ভিতর ’ঠক্কর’ নামক স্থানে স্বাধীনতা স্বৃতিস্তম্ভ নির্মানের জন্য স্থান নির্ধারন হয়। আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রাহক সাজেদুল ইসলাম চম্পার উপর দায়িত্ব পড়ে ন´া তৈরির। তিনি এক স্তম্ভের ভিতর অনেক ইতিহাস সন্নিবেশিত করে তৈরি করেন ন´া। সরকারি কোন সহযোগিতা ছাড়া সম্পূর্ণ সম্মিলিত উদ্যোগে অবশেষে নির্মিত হয় স্বাধীনতা স্মুতিস্তম্ভ। নক্সাকার সাজেদুল ইসলাম চম্পা তার নক্সায় ও নির্মানে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ বোঝাতে এটির স্থান নির্ধারন করছেন ৫৬ ফুট। স্তম্ভে উঠার জন্য নয়টি সিড়ি বা ধাপকে বোঝানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস হিসাবে। আর এই বাংলাদেশ যে একদিনে বা একটি আন্দোলনে স্বাধীন হয়নি সেটি বোঝাতে ১২টি পার্শ ও একটি স্তম্ভ মূল স্তম্ভ দিয়েছেন ১২টি বড় আন্দোলনকে লক্ষ করে। এ গুলি হলো পলাশির যুদ্ধ, সিপাহি বিল্পব, বঙ্গভঙ্গ, খেলাফত আন্দোলন, লাহোর প্রস্তাব, দেশ বিভাগ, ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট, ছয়দফা, আগরতলা মামলা, ’৬৯ এর গন অভ্যুঙ্থান এবং ’৭০ এর নির্বাচন। স্তম্ভটি পুরো কালো রংয়ের কারন হিসাবে ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদদের স্মারক হিসাবে দেখানো হয়েছে। স্তম্ভের উচ্চতা ২১ ফুট করার কারন হিসাবে ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনের ২১ ফেব্রুয়ারীকে বুঝিয়েছেন। স্তম্ভের গোড়ায় স্থাপন করা বেদি’র মাপ ১১ ফুট, যা মুক্তিযুদ্ধের ১১ সেক্টরকে বোঝানো হয়েছে। আর মুক্তিযুদ্ধকালিন পতাকাটা স্থাপন করা হয়েছে স্তম্ভের একদম উপরে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সাত বীর শ্রেষ্ঠ্র কে বোঝাতে সাতটি খুঁটি দিয়ে স্তম্ভটিকে সুরক্ষিত দেখানো হয়েছে। লাল-সবুজ বৈদ্যুতিক বাতি দিয়ে বোঝানো হয়েছে জাতীয় পতাকা কে।
নয়নাভিরাম, দৃস্টিনন্দন এই মনোরম স্তম্ভটি দেখতে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী সমেবেত হয় এখানে। রাতের আলোয় এই স্তম্ভের মূল ইতিহাস ফুটে উঠে। বর্তমানে এই স্থানে অনেক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধার পর রাজনৈতিক ও সংস্কৃতি কর্মিদের মিলনমেলা পরিনত হয়েছে স্থানটি। এ পযর্ন্ত এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু অর্থাভাবে নক্সা অনুযায়ী এখনো শেষ হয়নি পুরো প্রকল্পের কাজ। পুরো কাজ শেষ করতে এখনো সমসংখ্যক টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন নক্সাকার ও এই স্তম্ভ নির্মানের প্রধান উদ্যোক্তা সাজেদুল ইসলাম চম্পা।সান্তাহার নাগরিক কমিটির সভাপতি মোসলেম উদ্দীন বলেন, সান্তাহার স্বাধীনতা স্তম্ভ বর্তমান প্রজন্ম কে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে সহায়তা করবে। আমি এই প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ঠ্র সবাইকে সাধুবাধ জানায়।এই প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করতে বর্তমান সরকারের সহায়তা কামনা করেন। তরুণ লেখক রবিউল ইসলাম রবীন বলেন, সান্তাহারে মুক্তিযুদ্ধের স্বৃতিস্তম্ভ নির্মানের মধ্যে দিয়ে সেখানে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মিদের জন্য স্থায়ী মঞ্চ হয়ে গেছে। এখন বিনা অনায়াসে তাঁরা সেখানে অনুষ্ঠান করতে পারছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *