দামুড়হুদার দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের গলাইদড়ি ঘাটের সেতুটি এখন মরণফাঁদ; বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা; দ্রুত সংস্কারের দাবী
হাবিবুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা (প্রতিনিধি): চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা-মুজিবনগর ব্যস্ততম সড়কে মাথাভাঙ্গা নদীর উপর নির্মিত গলাইদড়িঘাট সেতুটি এখন মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। বছর খানেক আগে সেতুটির পাটাতন ও নীচের গার্ডারের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়ায় কয়েকবার মেরামত করেও অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে পারপার হচ্ছে শত শত ছোটবড় যানবাহনসহ হাজার হাজার মানুষ। যে কোন সময় সেতুটি ধসে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা। দ্রুত সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। জানা গেছে,১৯৯৫সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা-মুজিবনগর সড়কে মাথাভাঙ্গা নদীর উপর গলইদড়ি ঘাটে ভবিষ্যতে প্রশস্ত করার ব্যাবস্থা রেখে বেইলি সেতু নির্মিত করে। আর এ সেতুটি নির্মানের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন ঘটে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের। নির্মানের বছরই ২ আগষ্ট তৎকালীন সরকারের মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব অলি আহম্মদ, বীর বিক্রম এ সেতুটির উদ্বোধন করেন। নির্মিত সেতুৃটির প্রশস্ততা এতই কম যে, একই সময়ে একদিক থেকে আসা একটিমাত্র বাস বা ট্রাক পার হবার জন্য উপযোগী। প্রশস্ততা কম হওয়ায় সেতুর উপর একটি বাস, ট্রাক বা অন্য কোন গাড়ী উঠলে অপরদিক থেকে আসা যানবাহনকে সেতুর সামনের রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এর ফলে একই সময়ে উভয় দিক থেকে আসা যানবাহনগুলোর সেতুটি পার হতে অনেক সময় নষ্ট করতে হয়। বর্তমানে এ সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন ৫-৬টি পরিবহন সংস্থার প্রায় অর্ধ শতাধিক ঢাকাগামী কোচ, আঞ্চলিক রুটের বাস, পণ্যাবহী ট্রাক, মটরসাইকেল, সাইকেলসহ শত শত যানবাহন ও পথচারীরা চলাচল করে থাকে। যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ জেলার মানুষ বিভিন্ন যানবাহনযোগে এ সড়ক দিয়েই ঐতিহাসিক মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে যাতায়াত করে থাকে। বিশেষ করে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরিক্ষা শেষ হলে মুজিবনগরে পিকনিক অথবা শিক্ষাসফর করার জন্য প্রতিদিন কয়েক শত বিভিন্ন ধরনের যানবাহনযোগে হাজার হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করে থাকে। এ অবস্থা চলে মার্চ মাস পর্যন্ত। আবার এ সময়ের মথ্যে দর্শনা কেরু চিনিকলের মাড়াই মৌসুমে আখবোঝায় শত শত পাওয়ারট্রলি, ট্রাক্টর ইত্যাদি যাতায়াত করে থাকে। এছাড়া এই দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের ধারে ডজনখানেক হাট বাজারের অবস্থান। প্রতিদিন এসমস্ত হাট-বাজার থেকে কৃষিপন্যসহ নানারকম মালামালভর্তি ট্রাক এ সেতুটির উপর দিয়েই ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। কয়েক বছর আগে সেতুটির পাটাতনের নিচের গার্ডারের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরার ফলে কয়েক স্থানে পাটাতন দেবে যায়। অভিযোগ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগ গত এক বছরে বেশ কয়েকবার জোড়াতালি দিয়ে সেসব স্থান মেরামত করে। সেইসাথে সেতুর দুই পাশে “ধীরে চলুন, সামনে ক্ষতিগ্রস্থ সেতু, ৫টনের বেশি মালামাল বহন করা নিষেধ” লেখা সম্বলিত লাল রঙের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে। বর্তমানে প্রতিদিন এ সেতুটি দিয়ে মুজিবনগর, কেদারগঞ্জ, আটকবর, কার্পাসডাঙ্গা বাজার থেকে ১০ থেকে ২৫-৩০ টন পর্যন্ত ধান, ভূট্টা, কাঠ, পাটসহ বিভিন্ন মালামাল লোড করে ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় ছোট-বড় ট্রাক এ সেতুটির উপর দিয়ে চলাচল করছে। যেকোন সময় অতিরিক্ত লোডের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ এ সেতুটি ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনার ঘটার আগেই সেতুটি সংষ্কার করে এ পথে যাতায়াতকারী যানবাহন ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এমনটাই দাবী সচেতন মহলের।