বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত
পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
বৃহস্পতিবার রাত ৮ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত দুই দলের হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া রাত দেড়টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পাতাবুনিয়া বাজারে বিএনপি এবং গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় উভয় দলের কমপক্ষে অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এসময় ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গেলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হয় তাদের। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
এদিকে এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে গলাচিপা ও পটুয়াখালীতে বিএনপি-ছাত্রদল ও গণ অধিকার পরিষদ পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এসময় বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা রাস্তায় গাছ ফেলে ভিপি নূরকে উপজেলার বকুল বাড়িয়ায় রাত দেড়টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ঈদুল আজহার পরে গলাচিপা ও দশমিনায় প্রকাশ্য জনসভায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর স্থানীয় বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। এ ঘটনায় তার নিজের ইউনিয়ন গলাচিপার চর কাজলে গত বুধবার রাতে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করলে বাঁধে বিপত্তি। তারা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনার প্রতিবাদে চর কাজলে গণ অধিকার পরিষদও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। বিক্ষোভ শেষে দলটির নেতাকর্মীরা রাত ৮ টার দিকে চর কাজল বিএনপি অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এসময় উভয় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলায় প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়।
এ বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদ পটুয়াখালী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহা আলম জানান, ভিপি নূর নিজের ইউনিয়ন চর বিশ্বাস ও চর শিবায় গণ অধিকার পরিষদের সকল কার্যালয় ভাঙচুর করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ হামলায় তার ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম নুরসহ প্রায় ২৫-৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন বকুল বাড়িয়ায় অবরুদ্ধ ভিপি নুরুল হক নুরকে উদ্ধারে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীদের।
এদিকে রাত দেড়টার দিকে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে নুর জানান, রাত পৌনে ১০টা থেকে ১টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত এখনো অবরুদ্ধ। পুলিশ-সেনাবাহিনী এসে এখনো সন্ত্রাসীদের রাস্তা থেকে হঠাতে পারেনি। নির্বাচনে এই প্রশাসন কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে? এর আগে গাতাবুনিয়া এক সভায় তিনি বলেন, হাসান মামুনের নির্দেশে তার নিজের এলাকায় হামলা শিকারের ঘটনায় আমি লজ্জিত। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব আমাকে সহায়তায় করার জন্য চিঠি দিলেও আমাদের ওপর হামলা করা হলো। যেই সাহস বিগত দিনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগও দেখায়নি। জুলাই বিপ্লবের উত্তাল দিনেও আমার বাড়িঘরে আওয়ামী লীগ একটি ঢিলও ছুড়েনি। ২০২৪ এর নতুন স্বাধীনতার পর আজ আমাদের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব লজ্জিত কিনা আমি জানি না। তবে জাতি আজ লজ্জিত হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি যুগান্তরকে জানান, পটুয়াখালী একটি শান্ত জেলা। এখানে কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা হানাহানি নাই। কিন্তু গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ভিপি নরুল হক নূর গত কয়েক দিন ধরে স্থানীয় বিএনপির বিরুদ্ধে উত্তেজনাকর কিছু বক্তব্যের জের ও আজ বৃহস্পতিবার রাতে গলাচিপার চর কাজলে বিএনপি অফিসে হামলা ভাঙচুর করায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও আমাদের সকল দলীয় নেতাকর্মীদেরকে শান্ত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশাদুর রহমান জানান, বিএনপি ও গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারি ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।