বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী বলেই কি মেজর বজলুল হুদা জাতীয় বীর?
হাবিবুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী বলেই কি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া গ্রামের মৃত. রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মেজর বজলুল হুদা জাতীয় বীর? ৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ধানম-ির ৩২ নম্বরে ইতিহাসের বর্বরতম ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর কুখ্যাত খুনি মেজর বজলুল হুদা উল্লাসে ফেটে পড়ে অপর খুনি মেজর ফারুকের উদ্দেশে হাঁক ছেড়ে বলেছিলো- “অল আর ফিনিশড”… সেই চিহ্নিত ও আতœস্বীকৃত খুনি বজলুলই ৯০ এর দিকে এক জনসভায় প্রকাশ্যে আস্ফালন করে বলেছিল- শেখ মুজিবকে আমি নিজের হাতে গুলি করে মেরেছি। কার সাধ্য আছে আমার বিচার করার? এদেশে শেখ মুজিব হত্যার বিচার কোনোদিনই হবে না। সেদিন সে কটাক্ষ করে এবং উদ্ধতকণ্ঠে বলেছিল- “সেদিনই এ দেশে শেখ মুজিব হত্যার বিচার হবে, যেদিন আমার হাতের তালুতে চুল গজাবে।”
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এদেশে হয়েছে এবং দুর্ধর্ষ সে খুনিকে ফাঁসিতেও ঝোলানো হয়েছে। ২০১০ এর ২৮ জানুয়ারি বজলুল হুদাসহ আরো কয়েকজন খুনির ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়। খুনি নিপাত গেছে, কিন্তু রয়ে গেছে তার অবশেষ। আর সেই ধুলিসাৎ অবশেষে এখন জ্বাজল্যমান খুনির “জয়মাল্য”!
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় হাটবোয়ালিয়া গ্রামের দুর্ধর্ষ ও ঘৃণিত এ খুনির কবর শোভিত হয়েছে এক মস্ত শ্বেতপ্রস্তর ফলকে। আর তাতে খুনি বজলুলকে সম্বোধন করা হয়েছে “জাতীয় বীর” বলে। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করা যাবে না এমনও ঘটতে পারে! কীভাবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আতœস্বীকৃত ঘৃণ্য খুনিকে “জাতীয় বীর” অভিধা দেয়া হয়েছে এপিটাফে? এমন ধৃষ্ঠতা কীভাবে দেখাতে পারলেন খুনির স্বজনেরা? জাতীয় চেতনা ও আবেগকে লাথি মারার এমন দুঃসাহসই বা তারা পেয়েছে কোথা থেকে? এর পেছনের মদদদাতা কে বা কারা আজ জানা দরকার। এমনি এমনি এসব ঘটে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। কার্যকারণ তত্ত্ব তো অন্য অশুভ ইঙ্গিত দেয়।
আমরা লক্ষ করেছি, এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দ-ে ফাঁসি হওয়া আসামি জামায়াতে ইসলামীর নেতা কাদের মোল্লার কবরের ফলকেও “শহীদ” শব্দটি লিখে “আস্ফালন” প্রকাশ করেছিল জামায়াত-শিবির চক্র। এভাবে তারা আমাদের অর্জন, সাহস এবং চেতনাকে একে একে তাচ্ছিল্য করে চলেছে। আমরা জানি না স্থানীয় প্রশাসন ৭১-এর কসাই খুনি কাদের মোল্লার কবর থেকে “শহীদ” লেখা সম্বলিত ফলকটি উপড়ে ফেলেছিল কি না।
আমরা জানতে পেরেছি চুয়াডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া গ্রামে কুখ্যাত বজলুল হুদার কবরের উপর কলঙ্কের এ ফলক তোলা হয়েছে বছর তিনেক আগে থেকে। পারিবারিক কবরস্থান হওয়ায় সেখানে সাধারণের চলাচল তেমন একটা নেই বললেই চলে। জানা গেছে সে ফলকের ছবিও কাউকে তুলতে দেয়া হয় না। দৈবাৎ আমাদের এক সংবাদকর্মীর চোখে ধরা পড়েছে লজ্জাস্কর সেই প্রস্তর ফলক, যেখানে জাতির কলঙ্ক এক ঘৃণ্য খুনিকে আখ্যা দেয়া হয়েছে “জাতীয় বীর” বলে।
বাঙালি ও স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে লজ্জায় অপমানে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যায় এহেন আস্ফালন দেখে। একইসঙ্গে শঙ্কায় বিচলিত হয়ে ওঠে মন। আমাদের অহংকার ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে এসব ঘৃণ্য ফলক ক্রমাগত পশ্চাদগামীতার প্রতীক ফলক হিসেবেই মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে।
কোথায় দেশনেতা, কোথায় সরকার ও প্রশাসনের কর্তারা, আঁতে ঘা কি এখনো লাগেনি?