ধান চাষিদের মাথায় হাত ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিন ॥
সুমন মন্ডল : যে কৃষক অন্ন জোগায় তার নিজেরই অনাহারে থাকার মতো করুণ অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে, ধানের ন্যায্যমূল্য দূরের কথা উৎপাদন খরচও না ওঠার জন্য। দেশে পর্যাপ্ত ধানের মজুদ থাকা সত্ত্বেও ভারত থেকে চাল আমদানিতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার ঘটনা। কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলিয়ে তার ন্যায্যমূল্য যদি না পায় তবে তারা ঝুঁকি নিয়ে আর ধান উৎপাদন করবেন কিনা সে সংশয়ও সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতার আগে খাদ্যাভাব ছিল বাঙালির নিত্যসঙ্গী। স্বাধীনতার পর ৪৩ বছরে বাড়তি জনসংখ্যার আবাসিক চাহিদা ও রাস্তাঘাট, স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহৃত হওয়ায় চাষযোগ্য জমি অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারপরও বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ৪৩ বছরে ধান উৎপাদন বেড়েছে অন্তত তিনগুণ। এক সময় দেশের একাংশ প্রতিবছরই মঙ্গা নামের দুর্ভিক্ষাবস্থার শিকার হতো। দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষই ছিল হাড্ডিসার। অমর চিত্রশিল্পী সৈয়দ আবদুস সুলতান দেশের কৃষক ও মেহনতি মানুষের এই দৈন্যদশার ব্যথা ভুলতে তার তুলির আঁচড়ে পেশিবহুল মানুষের স্বপ্ন তুলে ধরতেন। একই ধরনের স্বপ্ন নিয়ে দেশের মানুষের অন্ন জোগাতে এগিয়ে আসেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। তারা উদ্ভাবন করেন একের পর এক উচ্চফলনশীল ধান। কৃষিবিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন এবং কৃষকের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে বিশ্বের অন্যতম দেশ। উৎপাদনের এই ধারা টেকসই হবে কিনা তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান উৎপাদন করছে তারা উৎপাদিত পণ্য বেচে উৎপাদন খরচ ওঠাতে পারবেন না এটা মেনে নেওয়া যায় না। দেশে পর্যাপ্ত ধান উৎপাদন সত্ত্বেও বিশাল অংকের চাল আমদানির ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নাজুক অবস্থার অবসানে চাল আমদানিতে শুল্ক আরোপ এবং ১০ লাখ টন চাল ও ১ লাখ টন ধান সংগ্রহের সরকারি নীতিও কোনো সুফল দেখাতে পারছে না। প্রতিদিনই কমছে ধানের দাম। আমদানি বন্ধ না হওয়ায় দরপতন ঠেকানো যাচ্ছে না। কৃষকদের বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। আমদানি বন্ধের পাশাপাশি কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে।