বাগেরহাটে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক

​বাগেরহাট প্রতিনিধি:

বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত সাড়ে তিন মাসে ২০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ২৪টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এতে কয়েক হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। প্রতিটি চুরির ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে থানায় এজাহার দেওয়া হলেও পুলিশ এ পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি। ফলে জেলা পল্লী বিদ্যুতের ৫ লাখ গ্রাহকের অধিকাংশ পরিবার উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
জানা গেছে, সবশেষ দুই দিন আগে ফকিরহাট উপজেলার পাগলা-শ্যামনগর তৈয়ব আলীর বটতলা সংলগ্ন বৈদ্যুতিক খুঁটিতে থাকা ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে কাজী মহিদুল ইসলামের বাড়ির সামনের বৈদ্যুতিক খুঁটিতে থাকা ট্রান্সফরমারটিও চুরি হয়। একই রাতে পার্শ্ববর্তী বিষ্ণুপুর গ্রামেও একটি ট্রান্সফরমার চুরির চেষ্টা করা হয়। চুরি করতে না পেরে খুঁটির নিচে ট্রান্সফরমা রেখে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

ফলে দুই দিন বিদ্যুৎহীন থাকতে হয় ওই এলাকার বাসিন্দাদের। পরে নতুন ট্রান্সফরমার লাগিয়ে দিলে সচল হয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। শুধু ফতেপুর গ্রাম নয়, সদর উপজেলার সৈয়দপুর, দড়িতালুক, মেগনিতলা, যাত্রাপুর, চাপাতলা, বাগমারা, বাদোখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতি রাতে ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরি ঠেকাতে অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে লোহার শিকল দিয়ে ট্রান্সফরমার বেঁধে রেখেছেন।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ম অনুযায়ী, চুরি হওয়া এলাকায় নতুন ট্রান্সফরমার লাগানোর জন্য ট্রান্সফরমারের দামের অর্ধেক পরিশোধ করতে হয় গ্রাহকদের। আর দ্বিতীয়বার চুরি হলে, ট্রান্সফরমারের মূল্যের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হয় গ্রাহকদের। যা দরিদ্র গ্রাহকদের জন্য খুবই কষ্টের। যে কোনো মূল্যে চোর সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করতে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন গ্রাহকরা।
ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে বিদ্যুৎহীন থাকা গ্রাহক ফতেপুর এলাকার বাসিন্দা মিনা নাজমুস সাকিব বলেন, রবিবার রাতে আমাদের ট্রান্সফরমারটি চুরি হয়ে যায়। মঙ্গলবার পর্যন্ত গত ৩ দিনেও আমরা বিদ্যুৎ পাইনি, কারণ ট্রান্সফরমারের মূল দামের অর্ধেক অর্থাৎ ২২ হাজার টাকা আমাদের দিতে হবে। এত টাকা একবারে জোগাড় করা খুবই কষ্টের।’
বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, মাঝে মাঝেই ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে। আর চুরি হলেই, কয়েকদিন বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয়। আবার টাকাও গুণতে হয়। এর থেকে ভোগান্তি আর কিছু নেই।’
বাদোখালী এলাকার কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, চুরি হওয়ার পরে এলাকার ট্রান্সফরমারটি লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি। তারপরও চুরি হওয়ার শঙ্কায় রয়েছি। ট্রান্সফরমার থাকে বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপরে, এটা পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। চুরি ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।’ বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সুশান্ত রায় বলেন, চুরির খবর পাওয়ার পরেই আমরা সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার করেছি।

এখনো কোনো চোরকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে চুরি ঠেকাতে গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা জরুরি। প্রতিটি চুরির ঘটনা একই রকম। চোরেরা ট্রান্সফরমারের ভেতরে থাকা মূল্যবান তামার তার নিয়ে ধাতব গোল বাক্স ও তেল ফেলে দিয়ে চলে যায়। পরে তামার তারগুলো ভাঙারির দোকানে খুবই কম টাকায় বিক্রি করে। ভাঙারির দোকানগুলোতে নজরদারি বাড়াতে পারলে চোর ধরা সম্ভব হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। চোরদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। খুব শীঘ্রই চোর সিন্ডিকেট শনাক্ত ও আটক করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’ বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের ৫ লক্ষাধিক গ্রাহক রয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে ৬৯ হাজার গ্রাহক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *