আসামি ছিনতাই : বাংলাদেশের ভবিষ্যত কি?
আমাদের দেশসহ বহির বিশ্বে যোদিও আসামী ছিনতাই নুতন কিছু নয়।
ঘটনাস্থল হতে, থানা হতে অথবা গাড়ীতে আসামী অনত্র নেওয়ার পথিমধ্যে আসামী ছিনতাই বাস্তবে বা সিনেমাতে নুতন কিছু নয়। যার দৃষ্টান্ত ভুরি ভুরি রয়েছে। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় পুলিশের নিকট থেকে একটি মারামারি মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতারের পর তাকে ছিনিয়া নেওয়ার ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছিলো। এই ঘটনার রেশ না কাটতে না কাটতেই গত শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় এক জন এজহারভুক্ত আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করে থানা হাজতে আনলে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় । তাকে ছিনিয়ে নিতে একটি রাজনৈতিক দল ও তার অঙ্গসংগঠন সমূহের উপজেলা পর্যায়ের উর্ধ্বতন নেতারা, একদল কর্মী নিয়া থানায় উপস্থিত হন । বিক্ষোভ প্রদর্শন, বাগবিতণ্ডা, হট্টগোল, পুলিশকে মারধর ও থানা ভাঙচুরের মাধ্যমে জোরপূর্বক ওসি ও সার্কেল এসপির সামনে থেকে আসামীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
উক্ত ঘটনায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ ২০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে । আমরা জানি, আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান; কিন্তু এই নীতি উন্নয়নশীল দেশসমূহে বলতে গেলে অকার্যকর ও অচল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট থেকে আসামিকে ছিনিয়া নেওয়া পুলিশের কর্তব্যকর্মে সরসারি বাধা প্রদানের শামিল। সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্যকর্মে বাধা প্রদানের বিষয়টি আমাদের পেনাল কোডের ১৮৬, ১৮৯, ৩৩২, ৩৩৩ ও ৩৫৩ ধারা অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। বিশেষত ৩৩৩ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো সরকারি কর্মচারীকে সরকারি কর্মচারী হিসাবে তাহার কর্তব্যকর্ম সম্পাদন হতে নিরস্ত বা ব্যাহত করিবার উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাত প্রদান করিলে উক্ত ব্যক্তি ১০ বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হইবে।
থানা হতে এজহারভুক্ত আসামি ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে থানা-পুলিশের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা যেটুকু ছিল, তাও বিনষ্ট হয়ে যাবে। এতে মানুষের অসহায়ত্ববোধ ও নিরাপত্তাহীনতা নিঃসন্দেহে বাড়বে। তাই পুলিশের ন্যায়সংগত কাজে বাধা প্রদানকারীদের পরিচয় যা হউক না কেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে তাদের অবশ্যই গ্রেফতার করতে হবে । ৫ আগস্ট/২৪ পর এমনিতেই দেশের থানা- পুলিশ নানা সমস্যায় জর্জরিত। তাদের পরিবহন সমস্যা যেমন আছে, তেমনি কোথাও কোথাও জনবলের ঘাটতিও রয়াছে । জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করিতে পারে নাই । এই অবস্থায় রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাধারণ নাগরিকদের সহায়তায় পুলিশের মনোবল বৃদ্ধিতে যেখানে কাজ করা প্রয়োজন, সেখানে তাদের মধ্যে নূতন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং কর্তব্যকাজে বাধা প্রদান করা উচিত নয। এই ক্ষেত্রে আমাদের ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন।
আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নাজুক অবস্থায় । অতীতে দেখেছি, স্থানীয় ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ধরাকে সরাজ্ঞান করে চলতেন। তাদের হুকুমমতো চলত স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের চাঁদাবাজি, হামলা-মামলায় সাধারণ জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো। ৫ আগস্টের পরও যদি একই সংস্কৃতি ও পরিস্থিতি বিরাজ করে, তাহলে পরিবর্তনটা কোথায়? তবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করিবার ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক । এর পাশাপাশি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দেওয়া, আবার সেই মামলা তুলিয়া লওয়া, মামলা-বাণিজ্যের আশ্রয় লওয়া ইত্যাদিও যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হইয়া দাঁড়াইয়াছে । পার্থক্য এই যে, পূর্বে ছিল কম, এখন এই ধরনের মামলার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন যদি আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিকট আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে মানুষ ভুল মেসেজ জানবে। তাহলে জনমনে এই প্রশ্নও উঠতে পারে যে, বাংলাদেশ কোন দিকে চাচ্ছে।