ভূঞাপুরের যমুনার চরাঞ্চলে বাদামের বাম্পার ফলন আদরের ডাকনাম ‘গুপ্তধন’
এ কিউ রাসেল, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের সদর উপজেলা, ভূঞাপুর, কালিহতী ও নাগরপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা যমুনা নদীর গর্ভে। বর্ষায় দু’কূল ভাসিয়ে নেয়া যমুনা শুষ্ক মৌসুমে ধু ধু বালুচর। যমুনার বুকে জেগে উঠা বালুচর অবহেলিত মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন। রাক্ষুসে যমুনার ভাঙ্গা গড়ার সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা মানুষগুলো বালুচরে দীর্ঘ দিন ধরে চীনা বাদামের চাষ করে আসছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, টাঙ্গাইলের ৪টি উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় ২হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে চীনা বাদামের চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে বাদামের দাম ও ফলন ভাল হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তাই চরের কৃষক বাদামেকে আদর করে নাম দিয়েছেন ‘গুপ্তধন’।
সরেজমিনে যমুনার চর ঘুরে দেখা গেছে, যমুনা নদীর বুক জুড়ে অসংখ্য ছোট বড় চর। আর এসব বালুচরে মাইলের পর মাইল চীনা বাদামের জমি। সাদা বালুর জমিনে সবুজ আর সবুজে ছেয়ে গেছে লতানো বাদামের গাছে। প্রতিটি লতানো বাদাম গাছের মুঠি ধরে টান দিলেই উঠে আসছে থোকা থোকা সোনালী রংয়ের চীনা বাদাম। এ যেনো বালুর নীচে লুকিয়ে থাকা ‘গুপ্তধন’। বর্ষার পানিতে তলিয়ে যাবার পূর্বেই গুপ্তধন ঘরে তুলতে ব্যস্ত শতশত কৃষক।
ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা চরের কৃষক লতিফ মিঞা জানান, যমুনা চরের বালু মাটি চীনা বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ বছর অনেক লাভ হবে বলে আশা করছি। প্রতি মণ কাঁচা বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২শত থেকে ২দুই হাজার ৪শত টাকায়। এবার ফলন ভালো হওয়ায় এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ মণ বাদাম পাওয়া যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাদামের ফলনও হয়েছে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হবে। নাগরপুর উপজেলার কৃষক আবদুল মোতালেব জানান, বালু মাটিতে অন্য কোন ফসল উৎপাদন করে বাদামের সমপরিমান লাভ হয়না। অন্যান্য ফসল উৎপাদনের চেয়ে চীনা বাদাম উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চরের সবাই বাদামের চাষ করে। বাদাম রোপনের পর অন্য ফসলে ন্যায় কোন পরিচর্জার প্রয়োজন হয়না। নেই রাসায়নিক সারের ব্যবহার । বীজ রোপন আর পরিপক্ক বাদাম উঠানোর লেবার খরচ ছাড়া তেমন কোন খরচ নেই বললেই চলে। একটি ফসলেই আমাদের সারা বছরের সংসার চলে। বালুচরের এই ফসলটি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ‘গুপ্তধন’। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি টাঙ্গাইলের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবুল হাশিম বলেন, ‘যমুনার চরে ২হাজার ২৪০ হেক্টর (৫৬০০একর) জমিতে ঢাকা-১ ও ডিজি-২ জাতের চীনা বাদামের চাষ হয়েছে। আমরা আশা করছি যমুনার চরে বাদামের ব্যাপক চাষাবাদ কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। কৃষকদের সবসময় আমরা সচেতনমূলক পরামর্শ দিয়ে থাকি এবং কোন রোগ হলে তাৎক্ষনিক উপ-সহকারী কৃষি অফিসারকে যথোপোযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে থাকি।’