শেরপুরে সোনালী ব্যাংক থেকে গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কর্মকর্তা বরখাস্ত
জাহাঙ্গীর হোসেন, শেরপুর থেকে : শেরপুরের নকলায় সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়ার কথা বলে ভূয়া স্বাক্ষরযুক্ত ভূয়া জমা রশিদের মাধ্যমে গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে এক গ্রাহকের ৩ লাখ টাকা উদ্ধার করে ফেরত দিয়েছে কতৃপক্ষ।
বুলবুল আহমেদ নামে ওই ব্যাংক কর্মকর্তা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড নকলা শাখায় অফিসার (ক্যাশ) পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁকে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শেরপুরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের (ডিজিএম) কার্যালয়ে সংযুক্তি করা হয়েছে।
২৩/১১/২০২৩ ইং তারিখের সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শেরপুরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) শ্যামল কুমার মন্ডল স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনালী ব্যাংক লিমিটেড নকলা শাখার ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান।
বুলবুলের বাড়ি কুড়িগ্রামের বৌমারী উপজেলার কাঠালবাড়ি গ্রামে। তাঁর পিতার নাম রহমত আলী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায় নকলা পৌরসভার ফেরুষা মহল্লার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান মনির হোসেন মিন্টুর মেয়ে মনিরা আক্তার (২০) পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য ০৩/১০/৩০২৩ ইং তারিখে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড নকলা শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন। ওইসময় তাঁর পরিচয় হয় ব্যাংক কর্মকর্তা বুলবুলের সাথে। বুলবুল সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়ার কথা বলে মনিরার কাছ থেকে ভূয়া স্বাক্ষরযুক্ত ভূয়া জমা রশিদের মাধ্যমে ৩ কিস্তিতে মোট ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। মনিরা ব্যাংকে অনেক ঘুরাঘুরি করেও সঞ্চয়পত্রের কোন ডকুমেন্ট হাতে পায়নি। বুলবুল মনিরাকে জানায় অনলাইনে সার্ভার সমস্যার কারণে ডকুমেন্ট বের করতে পারছিনা। পরে মনিরা তাঁর ব্যাংক একাউন্টে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সেখানে কোন টাকা জমা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তিনি (মনিরা) শাখা ব্যবস্থাপকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অপরদিকে সোনালী ব্যাংক নকলা শাখার গ্রাহক তাছলিমা বেগম পরিবার সঞয়পত্র কেনার জন্য ১৩/১১/২০২৩ ইং তারিখে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড নকলা শাখায় যান। ওই সময় ব্যাংক কর্মকর্তা বুলবুল সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য তাছলিমার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ৩ লাখ টাকা নেন এবং তাঁকে ভূয়া স্বাক্ষরযুক্ত একটি ভূয়া জমা রশিদ দিয়ে পরে যোগাযোগ করতে বলেন। বিষয়টি সন্দেহ হলে তাছলিমা ঘটনাটি শাখা ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমানকে জানান। ব্যবস্থাপক টাকা জমার রশিদটি ভূয়া দেখে ব্যাংকের নিরাপত্তা রক্ষীর মাধ্যমে বুলবুলকে আটক করেন এবং তাঁর কাছে থাকা ৩ লাখ টাকা উদ্ধার করে বিষয়টি সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শেরপুরের ডিজিএমকে জানান। ডিজিএম তৎক্ষনাত নকলা শাখায় এসে উদ্ধারকৃত ৩ লাখ টাকা তাছলিমাকে ফেরত দিয়ে ঘটনাটি ধামচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালান।
এছাড়াও ব্যাংক ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন ও এফডিআর করে দেওয়ার কথা বলে বুলবুল ব্যবসায়ীসহ সাধারণ জনগণের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় বুলবুল ২০২০ সনে অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড রৌমারী শাখায় চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরীর শুরুতেই তিনি অনলাইন জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েন। রৌমারী শাখায় তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেংকারির অভিযোগ উঠে। কিন্তু ডিজিএম শ্যামল রহস্যজনককারণে তাঁর বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাঁকে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড রাজিবপুর শাখায় বদলী করেন। সেখানেও আর্থিক কেলেংকারির অভিযোগ উঠে বুলবুলের বিরুদ্ধে। কিন্তু এবারও ডিজিএম শ্যামলের আনুকল্য পান বুলবুল। তাঁকে বদলী করা হয় সোনালী ব্যাংক লিমিটেড নকলা শাখায়।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড নকলা শাখার ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বুলবুলের আর্থিক কেলেংকারির বিষযটি নিশ্চিত করে জানান এ নিয়ে অনেকেই শাখায় অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি আমি উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁরা বিষয়টি দেখভাল করছেন।
অভিযোগকারি ব্যাংক গ্রাহক মনিরা আক্তার জানান আমি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমার দাদার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও আমার বাবার কষ্টার্জিত ৮ লাখ টাকা হারিয়ে আমার পরিবার এখন দিশেহারা। আমি ন্যায়বিচার চাই।
নকলা উত্তর বাজারের বিকাশ ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন (৪০) জানান স্ত্রীর নামে সোনালী ব্যাংক নকলা শাখায় কনজুমার ঋণ করতে গিয়ে পরিচয় হয় বুলবুলের সাথে। ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তিনি আমার কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন।
নকলা পৌরসভার ধুকুরিয়া মহল্লার বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী অভিযোগকারি হযরত আলী (৬২) জানান কিছুদিন আগে বুলবুল আমাকে ঋণ করে দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৬৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিষয়টি আমি শাখা ব্যবস্থাপককে জানিয়েছি।
নাম, পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান বরখাস্ত হওয়া সোনালী ব্যাংক নকলা শাখার কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ সোনালী ব্যাংক রৌমারী ও রাজিবপুর শাখায় কর্মকালীন সময়ে আর্থিক কেলেংকারি করেছেন। তখন যদি সোনালী ব্যাংক শেরপুরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) শ্যামল কুমার মন্ডল তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে পরবর্তীতে তিনি (বুলবুল) এসব অপকর্ম করতে সাহস করতেন না।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বুলবুল আহমেদকে বারবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শেরপুরের ডিজিএম শ্যামল কুমার মন্ডলকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।