বাগেরহাটে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিলের সিরিয়াল নিতে ২ হাজার টাকা অতিরিক্ত অর্থ আদায়
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির,বাগেরহাট সংবাদদাতা : বাগেরহাটের চিতলমারী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল রেজিষ্ট্রি করতে শুধু সিরিয়াল নিতেই ২ হাজার টাকা লাগে। তা না হলে অফিস সহকারি মোঃ আব্বাস আলী শেখ দলিল সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র জমা রাখেন না। এছাড়া সেবা গ্রহীতাদের জিম্মি করে শতকরা ২-৩ হারে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করা হচ্ছে।যে কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করার ক্ষেত্রে দলিলপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায় করেন, যা নিয়মবহির্ভূত। এ সব অভিযোগ তুলে ধরে বৃহস্পতিবার (২৪ আগষ্ট) দুপুরে গ্রাহক সেবার নামে চাঁদাবাজী বন্ধের দাবিতে মোঃ তাওহিদুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী আইন মন্ত্রণালয়, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক, জেলা সাব রেজিষ্টার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সাব রেজিষ্টারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে জেলা সাব রেজিষ্ট্রি কর্মকর্তা এটাকে “জাতীয় সমস্যা” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, মোঃ তাওহিদুর রহমান গত ২৩ আগষ্ট সকালে পূবালী বাংকের একটি মটগেজ দলিল রেজিষ্ট্রি সম্পাদনের জন্য চিতলমারী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে যান। এ সময় চিতলমারী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী মোঃ আব্বাস আলী শেখ তাকে বলেন, “দলিল লেখক সমিতির সিরিয়াল ছাড়া আমি দলিল জমা নিতে পারব না।” তিনি তাকে দলিল লেখক সমিতির ক্যাশিয়ার মোঃ আলাউদ্দীন সরদারের কাছে যেতে বলেন। আলাউদ্দীন সরদার দলিল সম্পাদনের সিরিয়াল নিতে হলে ২ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। কোন উপায়ান্ত না পেয়ে মোঃ তাওহিদুর রহমান বাধ্য হয়ে ২ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে ২নং সিরিয়াল নিয়ে দলিল সম্পাদন করেন।
মোঃ তাওহিদুর রহমান বলেন, “সরকারি নিয়মতান্ত্রিক ভাবে এ্যাডভোকেট দিয়ে দলিল লেখা সম্পাদন করলে, সরকারি রেজিষ্ট্রশন ফিস, জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ফিসসহ যাবতীয় রেজিষ্ট্রী ফিস ব্যাংকে জমা প্রদান করলে রেজিষ্ট্রি হওয়ার কথা। সেখানে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আমার কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়েছে। শুধু সিরিয়াল নয়, জমি রেজিষ্ট্রী করতে আসা অসহায় মানুষদের জিম্মি করে এখানে মাসে অবৈধ ভাবে ২-৩ পাসেন্টের নামে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। তাই বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে আমি লিখিত অভিযোগ করেছি।
দলিল লেখক সমিতির ক্যাশিয়ার মীর মাসুদ হুসাইন বলেন, ‘আমি এবং আলাউদ্দিন সাহেব এখানে ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে রয়েছি। বন্ধকি চুক্তি দলিলে সমিতির ফি বাবদ ২ হাজার টাকা জমা নেওয়া হয়।’
চিতলমারী সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী মোঃ আব্বাস আলী শেখ বলেন, ‘দলিল লেখক সমিতির কাছে আমরা জিম্মি। তারা দলিল জমা না দিলে আমাদের কোন কাজ নাই। তাই তাদের থেকে সিরিয়াল না নিলে আমি কোন দলিল জমা নিতে পারি না।’
চিতলমারী উপজেলা সাব রেজিষ্টার মিন্টু চক্রবর্ত্তী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা আমার অফিসের ভিতরের কোন ঘটনা নয়। আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। অফিসের বাইরে কিছু সমস্যা রয়েছে।’
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বেদবতী মিস্ত্রী বলেন, এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য আমি সাব রেজিষ্টারের সাথে কথা বলব।
জেলা সাব রেজিষ্টার রুহুল কুদ্দুস শিবলী বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। অভিযোগটা আমলে নিয়েছি। দলিল লেখকদের সমস্যা, একটা জাতীয় সমস্যা।’