তানোরে দুই মেয়রের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোরে পাশবিক নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী শামসুল আলম বাদি হয়ে মুন্ডুমালা পৌরসভার আলোচিত সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানী ও বর্তমান মেয়র সাইদুর রহমানকে প্রধান আসামি করে তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারী বৃহস্প্রতিবার রাতে আহত প্রতিবন্ধী শামসুল আলম নিজে বাদি হয়ে তানোর থানায় লিখিত অভিযোগটি করেছেন।
এদিকে এখবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রুয়ারী বুধবার মুন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানী ও বর্তমান মেয়র সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে মুন্ডুমালা বাজারে প্রকাশ্যে দিবালোকে শারীরিক প্রতিবন্ধী শামসুল আলমের ওপর পাশবিক নির্যাতন করা হয়। আস্থা প্রতিবন্ধী সংস্থার সভাপতি ও জাতীয় তৃনমুল প্রতিবন্ধী সংস্থার সাংস্কৃতিক বিষয় সম্পাদক শামসুল আলম। তাদের পাশবিক নির্যাতনে গুরুতর জখম শামসুল আলম এখন তানোর উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রতিবন্ধী নির্যাতনের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সর্বত্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, গত ১ ফেব্রুয়ারী বুধবার দুপুরে মুন্ডুমালা বাজারে সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানী প্রথমে থাপ্পড় ও চেয়ারে লাথি মেরে সামসুলকে মাটিতে ফেলে,এ সময় বর্তমান মেয়র সাইদুর রহমান তাকে চুলের মুঠি ধরে উঠিয়ে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে তার সঙ্গে যোগদেন মেয়রের অনুগত
বখাটেরা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসাধীন সামসুল আলম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তানোরের উন্নয়ন নামে ‘ফেক আইডি’ থেকে গোলাম রাব্বানীর স্ত্রীকে নিয়ে ভাতিজা উধাও এমন পোষ্ট দিয়েছে কে বা কারা। তিনি বলেন, আমি মেয়র সাইদুর ও রাব্বানীকে বার বার বলছি, আমি লিখিনি বা পোষ্ট করিনি, যদি প্রমান হয় যে শাস্তি দিবেন মেনে নিব। কিন্তু কোন কথা না শোনে সাইদুরের হাতের আঙ্গুলে পাথরের আংটি ছিল, সেই হাত দিয়ে মুখের ডান সাইডে চোখের নিচে কিল মেরে ক্ষত করে দিয়েছে। অল্পের জন্য চোখে লাগেনি। শুধু মেয়র সাইদুর না গোলাম রাব্বানীও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারে। এবিষয়ে আহত শামসুলের স্ত্রী নুরনাহার বেগম, কাঁদতে কাঁদতে বলেন, যে মানুষটি ভালো করে হাটতে পারে না, কিভাবে অমানুষের মতো তাকে মারতে ও পাশবিক নির্যাতন করতে পারে। মেয়র এখন টাকা ওয়ালা হয়েছে, এজন্য দাম্ভিকতা। আল্লাহ তাদের বিচার করবেন। এবিষয়ে মুন্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমান জানান, শামসুল ফেসবুকে বাজে কথা লিখে পোষ্ট করেন, একারনে বুধবার মুন্ডুমালা বাজারে তার উপর হামলা করে আমাদের লোকজন। খবর পেয়ে ছুটে আসি, আমি না আসলে তারা তাকে মেরে ফেলত। আপনি তার মুখে আংটি পরা হাত দিয়ে কিল মেরে ক্ষত করে দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন আমি মারলে তার বেচে থাকার কথা না। তবে ঠেলাঠেলি করতে গিয়ে লাগতে পারে। ফেসবুকে বাজে কিছু লিখলে আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে একজন প্রতিবন্ধী কিভাবে মারেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, সে দীর্ঘদিন ধরে আমার ও রাব্বানী ভাইয়ের বিরুদ্ধে লিখে এজন্য উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানী জানান, মুন্ডুমালা বাজারের ডাক্তার হাসানের মায়ের জানাযা শেষে বাজারে যাওয়ার সময় হট্রগোল দেখে কাছে গিয়ে দেখি শামসুলকে মারছে। আমি উত্তেজিত লোকজনকে থামায়, আমি কেনো মারবো। আপনিও নাকি কিল ঘুষি মেরেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, মিথ্যা বলব না, আমি একটি চড় মেরেছি মাত্র। এবিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় তৃনমূল প্রতিবন্ধী সংস্থার প্রচার সম্পাদক রাসেল জানান, ঘটনা শোনার পর ঊর্ধ্বতন কর্ততৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি হয়েও কেউ কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত ও পাশবিক নির্যাতন করতে পারে এটা কল্পনাও করা যায় না। তিনি বলেন, দ্রুত মামলা রেকর্ড ও আসামিদের গ্রেফতার করা না হলে আগামিতে এর প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা ও অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে কেন্দ্রীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়া হবে।
এবিষয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি কামরুজ্জামান মিয়া জানান, শামসুল আলম বাদি হয়ে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।