আপনার আচরণ সভ্য রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্ক: ইউএনওকে হাইকোর্ট
ডেস্ক রিপোর্ট : আদালতের নোটিশ জারিকারকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ইউএনও রেজাউল করিমকে ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, আপনি একটি পক্ষ নিয়ে যে আচরণ করেছেন- তা সভ্য রাষ্ট্রের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।
মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
শুনানির শুরুতে ইউএনও রেজাউল করিম ও নাজির উকিল মিয়া নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তখন আদালত বলেন, ‘আপনাকে ক্ষমা করলে আমরা আটকে যাব। আদালত সবার ওপরে। আদালতের আদেশ সবার মানতে হয়। আপনি আদালতের আদেশ মানেননি। আদালতের সমন নিয়ে নোটিশ জারিকারকরা আপনাদের কাছে গিয়েছিল। আপনার উচিত ছিল তাকে ধন্যবাদ দেওয়া। অথচ কী দুর্ব্যবহার না করলেন! কত অজুহাত দেখালেন! আপনি যে আচরণ করলেন তা সভ্য রাষ্ট্রে কলঙ্ক লেগে গেল। আপনি একটা ছোট বিষয় হ্যান্ডেল করতে পারেন না। কীভাবে জনসেবা করবেন? একটি কথা মনে রাখবেন আইন আদালত আছে বলেই আপনি সম্মান পান। আপনি যদি আইন না মানেন আপনাকে কেউ মানবে না।’
হাইকোর্ট ইউএনওকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, ‘আপনি নিজের ভবিষ্যৎ নিজে নষ্ট করেছেন। আদালত অবমাননার ঘটনায় আদালতে আসতে হয়েছে আপনাকে। আপনার ক্যারিয়ারে একটি স্পট পড়ে গেল। আমরা যদি একটি লাইন লেখে দিই আপনার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে।’
আদালত বলেন, ‘আদালতের জারিকারকের সঙ্গে আপনাদের দুর্ব্যবহারের ঘটনা পত্রিকায় এসেছে। সাধারণ মানুষ কী ভাবছে জানেন? মানুষ ভাবছে বিচার বিভাগ আর নির্বাহী বিভাগের মধ্যে মারামারি লেগে গেছে। এটা শোভনীয় নয়। বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকতে হবে।’
দালত নাজির উকিল মিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি মূল অপরাধী। আপনি সিনক্রিয়েট করেছেন। খুব খারাপভাবে মিসগাইড করেছেন।’
আদালত ইউএনওর আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি আইনমন্ত্রী ছিলেন। একজন সম্মানিত ব্যক্তি। দুর্ভাগ্যবশত আজ এই মামলায় আপনি এসেছেন।’
শুনানির শেষ পর্যায়ে আদালত ইউএনওকে আবার ডায়াসের সামনে আসতে বলেন। তাকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণ করবেন না। আপনার দায়িত্ব-কর্তব্যের প্রতি নজর রাখবেন। আদালতকে সম্মান না করলে আপনি কখনো সম্মান পাবেন না।’
পরে আদালত ইউএনও রেজাউল করিম ও নাজির উকিল মিয়াকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে জারি করা আদালত অবমাননার রুলের আদেশের জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেন। আদালতে ইউএনও-নাজিরের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
এর আগে গত ৭ জুন আদালতের নোটিশ জারিকারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মোবাইল কোর্ট বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ফরিদপুরের বোয়লমারী উপজেলার ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও নাজির উকিল মিয়াকে তলব করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন আদালত। সংশ্লিষ্টদেরকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এই ঘটনায় সেই ব্যাখ্যা জানতে তারা আজ (মঙ্গলবার) আদালতে উপস্থিত হন।
এ বিষয়ে তুষার কান্তি রায় জানান, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ইউএনও রেজাউল করি ও নাজির উকিল মিয়া হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ বিষয়ে শুনানি শেষে আগামী রোববার আদেশের জন্য রেখেছেন আদালত।