বিদ্যুতের পর বাড়ছে ওয়াসার পানির দাম, ১২ বছরে বাড়ল ১৩ বার
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স : বিদ্যুতের পর এবার ওয়াসার পানির দাম বাড়াচ্ছে সরকার। ; এর ফলে ভোক্তাদের প্রতি মাসে গুণতে হবে বাড়তি টাকা। এপ্রিল থেকে ওয়াসার পানি পেতে দিতে হবে বাড়তি দাম। ফলে আগামী এপ্রিল থেকে ঢাকায় আবাসিক গ্রাহকরা পানির দাম ছিল প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) ২০ টাকা হারে দিতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের গত প্রায় ১২ বছরের ১৩ বারের মতো পানির দাম বাড়াল ঢাকা ওয়াসা। তাদের শাসনামলে পানির দাম প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে ঢাকায় আবাসিক গ্রাহকদের জন্য পানির দাম ছিল প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) ৫ টাকা ৭৫ পয়সা। এখন তা হচ্ছে ২০ টাকা। ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, গত আট মাসের মধ্যে দুই দফা পানির দাম বাড়াল ঢাকা ওয়াসা। এর আগে গত জুলাইয়েও ৫ শতাংশ হারে দাম বাড়ানো হয়েছিল। ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর পানির দাম একবার করে বেড়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে দাম বেড়েছিল দুবার।
তবে দাম বৃদ্ধি পলেও পানি মান বৃদ্ধি পাবে কিনা, সেই পানি ‘সুপেয়’ হবে কি না, তার নিশ্চয়তা অবশ্য নেই। ঢাকা ওয়াসার সেবায় গ্রাহকদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি অসন্তুষ্ট—গত বছরের এপ্রিলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করেছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করে। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে বা সেদ্ধ করে পান করে। অন্যদিকে সাধারণ নাগরিকেরা বিভিন্ন সময়ে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ, ময়লা থাকার অভিযোগ করে আসছে। পানির দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে ওয়াসা জানিয়েছে, উৎপাদন ও বিতরণ ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের সামঞ্জস্য করা। আরেকটি কারণ দেখানো হয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোয় তার সঙ্গে ব্যয় সমন্বয় করা। ওয়াসার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বিদেশি দাতা সংস্থা থেকে নেওয়া ঋণের সুদ এবং আসলের অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। তবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, সেবার মান উন্নত ও পানির বিশুদ্ধতা নিশ্চিত না করে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঢাকা ওয়াসার একগুঁয়েমি ও স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ। পরিচালন ব্যয়, ঘাটতি ও ঋণ পরিশোধের অজুহাতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে পানির দাম বাড়ানো অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার তিনটি পানি শোধনাগার এবং ৯৩০টি গভীর নলকূপ রয়েছে। তবে গভীর নলকূপ চালু রয়েছে ৮৭০টি। বর্তমানে ওয়াসার পানি উৎপাদনক্ষমতা ২৬০ কোটি লিটার। আর চাহিদা রয়েছে ২৩৫ কোটি থেকে ২৪০ কোটি লিটার। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হলেও রাজধানীর ৩ লাখ ৭৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে বেশির ভাগই পানির মান নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। কারণ, দাম বাড়লেও সে তুলনায় পানির মান ভালো হচ্ছে না। উল্লেখ্য, আবাসিকে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম ১১ টাকা ৫৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা করা হয়েছে। আর বাণিজ্যিক সংযোগে প্রতি হাজার লিটার পানির দাম ৩৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ করেছে ওয়াসা।