বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে দৌড়ে ছুটে গেলেন ইউএনও, ভিডিও ভাইরাল

অপরাথ তথ্যচিত্র ডেস্ক:
সাতক্ষীরার শ্যামনগর বিএনপির বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে তখন রীতিমতো ইট বৃষ্টি চলছে। ঢাল সড়কি নিয়ে সড়কের দুই প্রান্তে অবস্থান নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে মত্ত উভয় শিবির। পুলিশ ও সেনাবাহিনী কিছুটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চেষ্টা চালাচ্ছেন সংঘর্ষে লিপ্ত পক্ষদ্বয়কে নিবৃত্ত করতে। এরই মধ্যে গাড়ি থেকে নেমে এক নারী জ্যাকেট কিংবা হেলমেট ছাড়াই দৌড় দিলেন উভয় পক্ষের মধ্যবর্তী স্থানের উদ্দেশে।

রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন। একজন নারী কর্মকর্তা হয়েও কোনও ধরনের নিরাপত্তাসামগ্রী ছাড়াই ‘ব্যাটল ফিল্ডে’ তার এমন উপস্থিতি চমকে দিয়েছে সবাইকে। তার এমন সাহসী ভূমিকার জন্য সাধারণ মানুষসহ দুপক্ষই রীতিমতো প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকাল ৫টার দিকে এমন দুঃসাহসিক কাণ্ড ঘটিয়ে রনী খাতুন এখন শ্যামনগরের মানুষের কাছে ভাইরাল ইউএনওর খেতাব পেয়েছেন।

বুধবার বিকালে উপজেলার ইসমাইলপুর এলাকায় বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। বিএনপি নেতা আশেক-ই এলাহী মুন্নার বাড়ির সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ সময় দুপক্ষের ইট বৃষ্টির মধ্যে পড়ে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর ও ইউএনওর বডিগার্ড আনসার সদস্য সাইফুল ইসলামসহ ২২ জন আহত হন। সংঘর্ষ এড়াতে এর আগে উপজেলা প্রশাসন শ্যামনগর সদরে ১৪৪ ধারা জারি করে। আহতদের মধ্যে আনসার সদস্য সাইফুলসহ পথচারী মেহেদী, বিএনপি কর্মী আব্দুর রশিদ, আব্দুল মজিদ ও আব্দুর রাজ্জাককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত ইউএনও রনী খাতুনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা এলাকায় টহল দেয়।

শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সদ্যঘোষিত উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ বুধবার উপজেলা সদরে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে। এমন খবরে দুপুরের দিক থেকে বিলুপ্ত কমিটির নেতাকর্মীরা উপজেলা সদরের বিভিন্ন প্রান্তে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নিতে থাকে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিএনপি নেতা সোলায়মান কবীরের নেতৃত্বে একটি মিছিল বিএনপি নেতা আশেক-ই এলাহী মুন্নার বাড়ির অতিক্রম করছিল। এ সময় অজ্ঞাত স্থান থেকে মিছিলের ওপর একটি লাঠি ছুড়ে মারার পর দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভয়পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল রিফাত পুলিশ ও সেনাসদস্যদের নিয়ে উভয়পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালায়। এ সময় শ্যামনগর থানার ওসি হুমায়ুন কবীরসহ উভয়পক্ষের অন্তত ২২ জন আহত হন। একপর্যায়ে বিএনপি নেতা আশেক-ই এলাহী মুন্না ও আ.লীগ কর্মী আহমদ আলী কয়ালের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

তারা আরও জানান, বংশীপুর থেকে নেতাকর্মীরা শ্যামনগরে প্রবেশের পথে প্রশাসনের বাধায় পিছু হটে। একপর্যায়ে তারা ফিরে যাওয়ার সময় ইসমাইলপুর এলাকায় পৌঁছে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইউএনও নিজের দেহরক্ষী আনসার সদস্যসহ সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের পিছু ফেলে দৌড়ে চলে যান সংঘর্ষের মধ্যে। এ সময় তার পাশে থাকা সাইফুল নামের এক আনসার সদস্য বুকে ও শ্যামনগর থানার ওসি হুমায়ুন কবীর পায়ে ইটের আঘাত পেলেও দ্রুত মাঝখানে পৌঁছে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পরে দুই পক্ষকে ওই স্থান থেকে হটিয়ে দেন পুলিশ ও সেনাসদস্যরা।

এ বিষয়ে সোলায়মান কবীরের পক্ষের যুবদল সভাপতি সফিকুল ইসলাম দুলু জানান, একজন নারী হয়ে তিনি (ইউএনও) অনেক সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। কীভাবে তিনি এমন দুঃসাহসিকতা দেখালেন বোঝা যাচ্ছে না।

আব্দুল ওয়াহেদ পক্ষের জেলা বিএনপির সদস্য আশেক-ই এলাহী মুন্না জানান, অলৌকিকভাবে ইউএনও ম্যাডাম রক্ষা পেয়েছেন। তার সাহসী ভূমিকার কারণে পরবর্তীতে সংঘর্ষ থামানো গেছে বলেও মন্তব্য করেন এ বিএনপি নেতা।

ইউএনও মোছা. রনী খাতুন জানান, তিনি জেনেবুঝেই এমন কাজ করেছেন। আরও বেশি ক্ষতি হওয়ার আগেই সংঘাত থামাতে কাউকে না কাউকে পদক্ষেপ নিতে হতো। তিনি সকলকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান। বতর্মানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *