নিষিদ্ধের পরও খুলনার বাজারে পলিথিনের ছড়াছড়ি

সেখ রাসেল, ব্যুরো চিফ, খুলনা:
​ সরকার পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করার পরও বাজারে বন্ধ হয়নি এর ব্যবহার। নিষিদ্ধের কিছুদিন পরই খুলনায় পূর্বের অবস্থায় ফিরেছে পলিথিনের বিকিকিনি। জনসচেতনতা ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি করলেও কাজে আসেনি। গত ১ নভেম্বর নিষিদ্ধের পর সে মাসেই খুলনা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর কয়েকটি অভিযান চালালেও জনবলের অভাবে তা ধারাবাহিকতা হারায়। ফলে পরিবেশ দূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সরকারি উদ্যোগ। খুলনা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সরকারি নির্দেশনার পর নভেম্বর মাসে ৬ টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। যেখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা দায়ের হয়। ২৮৭ কেজি পলিথিন জব্দের পাশাপাশি জরিমানা করা হয় ১৩ হাজার ৭০০ টাকা। এর পর দেড়মাস পার হলেও আর কোন অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। খুলনার কাঁচাবাজারসহ সর্বত্রই অবাধে চলছে এ পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার। ব্যবসায়ীদের দাবি, খুচরা ও স্বল্প মূল্যের পণ্য বিক্রিতে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই পলিথিনে পণ্য দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। অপরদিকে পণ্য ক্রয়ের পর বিকল্প ব্যাগ কিনতে ক্রেতাদের টাকা খরচে অনীহা থাকায় বন্ধ হচ্ছে না নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার। সরেজমিনে নগরীর কাঁচাবাজার ও মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যেই নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগে সবজি, মাছসহ সব ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন। ক্রেতা বিক্রেতা কেউ মানছেন না পলিথিন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা। তবে বিকল্প সামগ্রী ব্যয়বহুল হওয়ায় বাধ্য হয়েই পলিথিন ব্যবহার করতে হচ্ছে বলে জানান ক্রেতা ও বিক্রেতারা। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পলিথিনে করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির বিষয়ে কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আজাদ বলেন, আমরা পণ্য বিক্রি করার সময় দেখি ক্রেতারা ব্যাগ নিয়ে আসে না। তারা ব্যাগ নিয়ে এলে তাদের ব্যাগেই পণ্য দিতে পারি। আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বাঁধা না দিয়ে যেখানে পলিথিন উৎপাদন হয় আগে তা বন্ধ করা উচিত।
মনছুর আলী নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা পলিথিনেই পণ্য বিক্রি করছি। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। তারপরেও বিকল্প কিছু না থাকায় পলিথিনেই পণ্য বিক্রি করতে হয়। আমার কথা হচ্ছে পলিথিনের কারখানা বন্ধ করা হোক, তাহলে আর কোনো পলিথিন থাকবে না। সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ, জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি আইনের কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি। নামামত্র দু’চারটা অভিযান করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এমন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ধারাবাহিক অভিযান, সচেতনতা এবং আগে নিষিদ্ধ পণ্যে বিকল্প তৈরি করা উচিত। তবেই কার্যকর সুফল পাওয়া যাবে। সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করেছে তারপরও কেনো পলিথিন ব্যাগে বাজার ক্রয় করছেন জানতে চাইলে মো. ওহিদুজ্জামন নামে এক ক্রেতা বলেন, আমরা দূর-দূরান্ত থেকে বাজার করতে আসি। আমাদের সঙ্গে অনেক সময় ব্যাগ থাকে না। বাধ্য হয়ে পলিথিনেই বাজার কিনতে হয়। সরকারের উচিত বিকল্প ব্যবস্থা করে অভিযান চালানো। তাহলে ব্যবসায়ীরাও পলিথিনে পণ্য দিতে পারবেন না, আর আমরাও পলিথিনে বাজার নিতে পারবো না। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সনাক)খুলনা’র সভাপতি এ্যাড. কুদরত-ই-খুদা বলেন, পলিথিনের ব্যবহার রোধ করতে প্রথমে এর উৎসমূল বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পরিবেশ বন্ধব উৎস খুঁজতে হবে। যেমন-পাট থেকে উৎপাদিত ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে হবে। আইন প্রয়োগকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। এ ছাড়া সামাজিক সচেতনাতার কোন বিকল্প নেই। খুলনা সনাকের পক্ষ থেকে আমরা কোন সচেতনতামূলক কর্মসূচি না করলেও সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি। এ বিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক পারভেজ আহম্মেদ বলেন, ২০০২ সালের পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ আইনের আলোকে গেল বছরও আমাদেও অভিযান অভ্যাহত ছিল। নতুন করে গত ১ নভেম্বর সরকার পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে উদ্যোগ নিলে আমরা খুলনায় বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ী, কমিটির নেতাদের সাথে মতবিনিময়সহ সচেতনতায় লিফলেট বিতরণ করি। খুলনার সুপারশপগুলোতে বন্ধ হলেও বাজারে পলিথিনের ব্যবহার আবারও বেড়েছে। জনবল এবং লজিস্টিক সার্পোটের ঘাটতি থাকায় সব সময় অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তবে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি বিবেচনায় ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তৎকালীন সরকার। সে সময় বাংলাদেশ ছিল এমন পদক্ষেপ নেওয়া বিশ্বের প্রথম দেশ। আইন করে নিষিদ্ধ করাটা কাজেও এসেছিল। ২০০৬ সাল পর্যন্ত মোটামুটি পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার সেভাবে দেখা যায়নি। এরপর ধীরে ধীরে নজরদারির অভাবে বাজারে ব্যাপকহারে জায়গা করে নেয় পলিথিন। আর গত ১৫ বছরে বিনা বাধায় রকেটগতিতে সর্বত্রই বেড়েছে পরিবেশবিধ্বংসী এ নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *