থমথমে থানচি আলীকদম
ডেস্ক রিপোর্ট: উপজেলা সদরে অবস্থিত সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ক্যাশ কাউন্টার থেকে টাকা লুট এবং বৃহস্পতিবার রাতে আবারও ব্যাংক ও থানা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ঘটনার পর থানচি উপজেলায় জনমনে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে এক ধরনের থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রুমা ও থানচিতে তিন ব্যাংকে ডাকাতি, পুলিশ ও আনসারের অস্ত্র লুট, থানায় হামলা ও ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় পৃথক ছয়টি মামলা করেছে পুলিশ। থানাগুলোতে পুলিশের সদস্য সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে। প্রতিটি থানায় একজন সহকারী পুলিশ সুপারকে (এসপি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে অপহৃত সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উদ্ধারের পর তার পরিবারে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অপহরণ-পরবর্তী ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন। বুধবারের হামলার ঘটনার পর থেকে থানচি বাজার এবং আশপাশের এলাকায় দোকানপাট বন্ধ। থানচি বাজারে প্রায় আড়াই শ দোকানের মধ্যে গতকাল ১০-১৫টি দোকান ছাড়া আর কোনো দোকান খোলেনি। বাজারে আসেনি প্রান্তিক ক্রেতারাও। থানচি বাজার কমিটির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো জানান, ভীতিকর অবস্থার কারণে লোকজন আসছে না। কবে থেকে এ অবস্থা স্বাভাবিক হবে তাও বোঝা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ঈদুল ফিতর, নববর্ষ এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে এই সময়ে থানচি উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোতে ব্যাপক সমাগম ঘটে। এর ফলে চাঙা হয়ে উঠে স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্য, হোটেল- মোটেল ও রিসোর্টগুলো। কিন্তু সন্ত্রাসী হামলার পর পর্যটক আসার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। এদিকে থানচি বাজার ও উপজেলা সদরে সন্ত্রাসী হামলার পর অনেকেই এলাকা ছেড়ে জেলা সদর বা অন্য কোথাও চলে যেতে শুরু করেছেন। থানচিতে যেসব বাস ও অন্যান্য গাড়ি চলাচল করে সেগুলোতে স্থানীয় লোকদের সংখ্যাই বেশি।
যারা এলাকা ছেড়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। থানচি থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, বুধবারের ঘটনার পর বাজার, উপজেলা সদর এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসমূহে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা জনগণকে এলাকায় অবস্থানের জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। তবুও অনেকেই তা শুনতে চাইছেন না। অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এলাকা বিবেচনায় থানচি থেকে তারা জেলা সদরে চলে যাচ্ছেন- এমন খবর আমরা পাচ্ছি। থানচিতে যোগাযোগ করে জানা গেছে, শঙ্খ নদে নৌপথে যেসব ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করে সেগুলোও যাত্রীর অভাবে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। বান্দরবান-থানচি সড়কের বাসচালক জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, বান্দরবান থেকে থানচি যাওয়ার গাড়িগুলো যাত্রী ও পর্যটকের অভাবে প্রায় ফাঁকা যেতে হচ্ছে। তবে আসার সময় কিছু যাত্রী পাওয়া গেলেও অন্যান্য দিনের মতো পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টার দিকে থানচি-আলীকদম সড়কের ডিম পাহাড় পয়েন্টে একটি চেকপোস্টে ভাঙচুর চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ সময় সেখানে অবস্থানরত পুলিশ তাদের বাধা দিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এ সময় পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। আলীকদম থানার ওসি তৌবিদুর রহমান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, থানচি উপজেলা সদরে হামলাকারীদের একটি ছোট অংশ সেখান থেকে বের হয়ে থানচি-আলীকদম সড়কপথে যাওয়ার সময় রাস্তায় ব্যারিকেড দেখে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটায় বলে ধারণা করছি। তবে এ ঘটনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সেখানে আর কোনো ঘটনা ঘটেনি। ডিম পাহাড় চেকপোস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর জনবল আরও বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
থানায় নিরাপত্তা জোরদার : গতকাল দুপুরে থানচি থানার চারপাশে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি থানায় একজন করে সহকারী পুলিশ সুপারকে (এসপি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। থানচি থানায় সহকারী পুলিশ সুপার জুনায়েদ জাহিদী বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তিন থানায় তদারকের জন্য একজন করে এএসপি এসেছেন। থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জসিম উদ্দিন জানান, গোলাগুলির পর থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত আরও ১০০ পুলিশ সদস্য থানায় আসছেন। লোকজনের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানান তিনি।
রুমা ও থানচিতে ছয় মামলা : বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে তিনটি ব্যাংকে ডাকাতি, পুলিশ ও আনসারের অস্ত্র লুট, থানায় হামলা ও ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় পৃথক ছয়টি মামলা করেছে পুলিশ। রুমা ও থানচি থানায় এসব মামলা হয়েছে বলে গতকাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন থানচি থানার চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) সঞ্জয় সরকার। তিনি বলেন, থানচি থানায় সশস্ত্র কেএনএফ সদস্যরা সরাসরি হামলা চালায়নি। তারা থানচি বাজারে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং পুলিশকে পাল্টা গুলি করতে বাধ্য করে। তারা তিনটি জিপে চড়ে থানচি বাজারে এসেছিল। বিজিবি ক্যাম্প, সেনা ক্যাম্প ও থানা পুলিশের সর্তক অবস্থানের পরও বারবার হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের উদ্দেশ্য কী তা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছি না। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি