করোনাভাইরাস: লকডাউনের সুফল মিলছে খুলনায়, কমছে মৃত্যু
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: ‘লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, জনসচেতনতা কিছুটা বৃদ্ধি, মাস্কের ব্যবহার, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুফল খুলনায় দেখা যাচ্ছে’
খুলনায় ঈদ-উল-আজহার পর করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও শনাক্ত বাড়লেও এখন তা কমে আসছে। বিশেষ করে লকডাউনের প্রভাবে খুলনার কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রবিবার (১ আগস্ট) খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, “লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, জনসচেতনতা কিছুটা বৃদ্ধি, মাস্ক ব্যবহারে অনীহা দুর, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুফল খুলনায় দেখা যাচ্ছে।”
বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ডা গাজী মিজানুর রহমান জানান, খুলনায় ২২ জুন থেকে লকডাউন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন শুরু হয়। যা এখনও চলমান রয়েছে। ২২ জুনের আগের সংক্রমিতরা হাসপাতালে শনাক্ত হয়েছে। যা ১০-১৫ দিন পর্যন্ত আসতে থাকে। আর তাদের সংস্পর্শে থাকারাও শনাক্ত হতে আরও ১৯-১৫ দিন সময় লাগে। সব মিলিয়ে এক মাস অতিবাহিত হওয়ার ফলে এখন আর নতুন সংক্রমণ হচ্ছে না। লকডাউনের সফলতা এটা। এটাকে ধরে রাখতে হলে জনসচেতনতার বিকল্প নেই।
খুলনা জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৭৭২টি। কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয় ১৮৯ জন। গত ২৪ ঘন্টায় শনাক্তের হার ২৪%। আর এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১,১৭,৮৫৪টি। কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ২৩,৯৬৮ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৯৮ জন।
খুলনার ৫টি হাসপাতালে সকাল ৮টা পর্যন্ত ৩৫২ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এ হাসপাতালে সিট রয়েছে ৫৬৫টি। ২১৩টি শয্যা খালি রয়েছে। যা মোট শয্যার ৩৮%।
খুলনার দুটি হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ১ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। খুলনা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে তিনজন এবং শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের ফোকাল পার্সন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৩৭ জন। যার মধ্যে রেড জোনে ৫০ জন, ইয়ালো জোনে ৫৩ জন, আইসিইউতে ২০ জন এবং এইচডিইউতে ১৪জন ভর্তি রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৩০জন। আর সুস্থ হয়েছেন ২৫ জন.
খুলনার শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. প্রকাশ দেবনাথ জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় গোপালগঞ্জের গোবরা এলাকার ফয়জুল চৌধুরী (৫০) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন ৪৩ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে রয়েছে ১০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ জন রোগী ভর্তি হয়। সুস্থ হয়েছেন একজন।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. কাজী আবু রাশেদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৫ জন, তার মধ্যে ১৮জন পুরুষ, আর ২৭ জন নারী। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৯ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৪ জন।
খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৬৬ জন ভর্তি রয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছেন ৮ জন আর সুস্থ হয়েছেন ৩ জন। আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন ১০জন এবং এইচডিইউতে তিনজন।
গাজী মেডিকেল হাসপাতালের স্বত্তাধিকারী ডাঃ গাজী মিজানুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে কোনও রোগীর মৃত্যু হয়নি। বেসরকারি এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬১ জন। আইসিইউতে রয়েছেন তিনজন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৫ জন আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪ জন।