বনানীর আগুনে শ্রীলঙ্কার নাগরিকসহ নিহত বেড়ে ১৯, দগ্ধ ৭০

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: রাজধানীর বনানীতে ১৭ নম্বর রোডে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে এফআর টাওয়ারে লাগা আগুনে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে এক শ্রীলঙ্কার নাগরিক রয়েছে। এছাড়া অগ্নিদগ্ধ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও অন্তত ৭০ জন। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাতে দমকল বাহিনীর সিনিয়র স্টেশন অফিসার খুরশীদ আনোয়ার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ওই ভবনের ভেতর থেকে ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আর বাকি ৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে আছেন- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার বালুগ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম মৃধার ছেলে পারভেজ সাজ্জাদ (৪৭), আমিনা ইয়াসমিন (৪০), দিনাজপুরের সদর উপজেলার বালুয়াকান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মামুন (৩৬), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সের আবদুল্লাহ আল ফারুক (৩২), মাকসুদুর (৬৬), মনির (৫০) এবং শ্রীলঙ্কার নাগরিক ও বনানীর স্কেন ওয়েল লজিস্টিকসের ব্যবস্থাপক নিরস ভিগ্নে রাজা (৪০)। অন্যদের নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি। এদিকে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরমান আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগুনে ভেতরে থাকা অনেকেই প্রাণ বাঁচতে ভবন থেকে লাফিয়ে, ক্যাবলের তার বেয়ে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, অ্যাপোলো হাসপাতাল ও ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর পৌনে ১টার দিকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ওই বহুতল এফআর টাওয়ারে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়লে ভেতরে আবস্থানকারীদের আর্তনাদ, আহাজারি শুরু হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও ভেতরে আটকাপড়াদের উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে। এর পর বিকেল ৩টার দিকে ভেতরে আটকাপড়াদের ক্রেন দিয়ে ও বিকেল ৪টার দিকে এয়ার লিফটে করে এক এক করে আটকাপড়াদের নামানোর কাজ শুরু হয়। এসময় উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে যোগ দেন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ফায়ার ইউনিটের সদস্যরা। পানির সংকটে শুরু থেকেই আগুন নিয়ন্ত্রণ কাজ ব্যাহত হয়। বেসরকারি বাণিজ্যিক এই ভবনটিতে প্রায় হাজারখানেক লোক বিভিন্ন অফিসে কর্মরত বলে জানা গেছে। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ভবনের বিভিন্ন অফিসে সবাই তখন হিসাব-নিকাশের কাজে ব্যস্ত ছিল বলে জানা গেছে। আহতদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা দিতে রাজধানীর সব হাসপাতালকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা সিটির দুই মেয়র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বিষয়টির তদারকি করছেন।
এদিকে প্রায় ৭ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয। এর আগে দুপুরের পর থেকেই খবর পেয়ে আটকেপড়াদের খবর নিতে স্বজনরা ভবনটির চারপাশে উপস্থিত হন। তাদের সঙ্গে ভেতরে আটকেপড়া স্বজনদের কারও কারও কথা হয়। ভেতর থেকে হাত নাড়িয়ে ও জামা নীচে ফেলে বাঁচার আকুতি জানান অনেকে। ভেতরে চিৎকার ও কান্নার রোল পড়ে। উৎসুক হাজারো মানুষ সেখানে ভিড় করেন। অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে উদ্ধারকাজেও সাধ্যমত সহায়তা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *