মংলা বন্দরে জরুরী অবস্থার সময় গুড়িয়ে দেয়া বৈধ প্লটগুলো আজো ফিরিয়ে দেয়া হয়নি ব্যবসায়ীদের
মনির হোসেন, মংলা, (বাগেরহাট): মংলা বন্দরে জরুরী অবস্থার সময় গুড়িয়ে দেয়া বৈধ ব্যবসায়িক প্লটগুলো আজো ফিরিয়ে দেয়া হয়নি মালিকদের । বন্দরের মাধ্যমে ব্যবসায়িক দেড় শতাধিক প্লট বরাদ্দ নিয়েও দীর্ঘ ১যুগ ধরে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেনা প্লট মালিকরা । জরুরী অবস্থার সময় একটি প্রভাবশালী মহলের ইশারায় সম্পূর্ন বৈধ প্লটগুলো বুলড্রেজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয় । সেই প্লট মালিকরা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধন্যা দিয়েও স্থায়ী সমাধান করতে পারেনি আজও। এ ব্যাপারে ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল বন্দরের পুরাতন মোংলাস্থ এলাকার অধিগ্রহণকৃত জমি থেকে উচ্ছেদকৃত প্লট মালিকদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত এক সভায় স্ব স্ব মালিকদের প্লট বুঝিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি । আটকে আছে নানা জটিলতায় । এদিকে একটি প্রভাবশালী মহলের কতিপয় নেতা বন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজসে উচ্ছেদকৃত প্লট মালিকদের জায়গার বরাদ্দপত্র বাতিল করে নামে বেনামে নেয়ার পায়তারা চালাচ্ছে । ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, পুরাতন মোংলার রিজেকশনগোলী, ফেরিঘাট, মামার ঘাট, বেঙ্গল ওয়াটার জেটি, ২নং জেটি, ১নং জেটি সংলগ্ন এলাকায় মোংলা বন্দরের নিয়ম নীতি অনুযায়ী ১৫২টি প্লট বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা । তবে ২০০৭ সালে জরুরী অবস্থার সময় একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের চাহিদামতো উৎকোচ না পাওয়ায় সেনা সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে কৌশলে সম্পূর্ন বৈধ দেড় শতাধিক প্লট বুলড্রেজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। এতে ব্যবসায়ীরা পথে বসতে বাধ্য হয় । এক পর্যায় ব্যবসায়ীরা নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়, বন্দর চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে জায়গা ফিরে পেতে ব্যর্থ হন । পরে ক্ষতিগ্রস্তরা ২০০৯ সালে হাইকোর্টে ৮০২৬ নং রিট মামলা দায়ের করেন । এছাড়া ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ব্যবসায়ীদের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সচিব নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়কে নির্দেশ দেয়া হয় । প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ ৩ বছরেও বাস্তবায়ন করেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ । বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ ব্যাপারে কয়েক দফায় উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি । ফলে ব্যবসায়ীরা ফিরে পায়নি তাদের প্লটগুলো । শুধু আশার আলো নিয়েই তারা ফিরছেন । চলতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসে মোংলা রামপালের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার আঃ খালেক নিজে বন্দর চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে প্লট মালিকদের কিছু প্লট বুঝিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিলেও আজ পর্যন্ত তা সম্পূর্ন বাস্তবায়ন হয়নি । এ বিষয় ব্যবস্থা নিতে মোংলা বন্দর বনিক সমিতি গত ৭ জুন পুনরায় বন্দর চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ । ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, তাদের ব্যবসায়িক প্লটগুলো ফিরে পেলে পূরাতন বন্দরের রিভারসাইড এলাকা রমরমা ব্যবসা বানিজ্য শুরু হয়ে যেতো । পর্যাটকরা এসে আরো স্বাচ্ছন্দবোধ করতো। বন্দর ও পৌর কর্তৃপক্ষ কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পেতো । এ ব্যাপারে বনিক সমিতির সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমান মাস্টারের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, ২০০৭ সাল থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের প্লটগুলো হারিয়ে পথে বসেছে । এতে মোংলা বন্দরের ব্যবসা বানিজ্যে যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি বন্দর হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব । ব্যবসায়ী নেতা আরো বলেন, ২০১৪ সালের ৪ মে অধিগ্রহণকৃত জমি থেকে উচ্ছেদকৃত প্লট মালিকদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ মাসের মধ্যে বরাদ্দকৃত প্লট বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও তা ৪ বছরেও দেয়া হয়নি । এছাড়া প্রকৃত প্লট মালিকদের জায়গায় অবৈধ ভাবে কেউ কেউ আস্তানা গড়লেও বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেয়নি । এ নেতা আরো বলেন, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আঃ খালেক,বন্দরের চেয়ারম্যান ও বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আরেকটু আন্তরিক হলে দ্রুত প্লট মালিকরা তাদের প্লটে ব্যবসা বানিজ্য শুরু করতে পারবে