টাঙ্গাইলের শাহীন শিক্ষা পরিবারে মধ্যযুগীয় কায়দায় শিক্ষার্থীকে পৈশাচিক নির্যাতন!
বিভাগীয় প্রতিনিধি (ঢাকা) : টাঙ্গাইলের শাহীন শিক্ষা পরিবারের আবাসিক শিক্ষার্থীদের উপরে শিক্ষক দ্বারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পৈশাচিকবাবে রডের ছ্যাকা দিয়ে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেছেন এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করতে আসা আবসিক শিক্ষার্থীরা। নির্যাতনের প্রতিবাদ ও প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের অবহিত করার শাস্তি হিসাবে শুক্রবার (৫ মে) বিকালে ছাত্রদের এ পৈচাশিক নির্যাতন চালানো হয়। এমনি পৈচাশিক নির্যাতনের শিকার হয়ে শুক্রবার (৫ মে) সন্ধ্যায় গুরুতর আহত অবস্থায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয় প্রতিষ্ঠানটির ৫ আবাসিক ছাত্র। বিষয়টি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যম কর্মীদের নজড়ে আসে। তারপর থেকেই অভিভাবক মহলে তোলপাড় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পরে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শনিবার (৬ মে) দুপুরে আহতদের চিকিৎসা ব্যতিরেখেই জোর করে আবাসিক ভবনে ফিরিয়ে নেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। আহত শিক্ষার্থীরা জানায়, শুক্রবার (৫ মে) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নবম শ্রেণির কয়েকজন ছেলে শিক্ষার্থীর সাথে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাকবিতন্ডা এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টির আবাসিক ভবন পরিচালক বাবুল হোসেনের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। পরিচালক আবুল হোসেন তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে দশম শ্রেণির ১০/১২জন শিক্ষার্থীকে ভবনের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে ও কক্ষ বন্ধ করে মধ্যযুগীয় কায়দায় লাঠি দিয়ে মারধর করে গুরুতর আহত অবস্থায় রুমে আটকে রাখে। এ সময় মারধরের প্রতিবাদ করায় বগুড়া জেলার তালোরা এলাকার সামাদ মিয়ার ছেলে প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র রিজভীকে ক্ষিপ্ত হয়ে পৌশাচিক কায়দায় লোহার রড আগুনে পুড়িয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছেঁকা দেয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে এ ঘটনায় একজন গুরুতর আহত অবস্থায় জ্ঞাণ হারিয়ে ফেললে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা রিজভীসহ আহতদের উদ্ধার করে। পরে আহত ওই ৫ শিক্ষার্থীকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। বাকি আহত ৫/৬জন শিক্ষার্থী কর্তৃপক্ষের ভয়ে আবাসিক ভবন থেকে পালিয়ে গেছে বলেও জানায় অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেন, প্রতিনিয়তই এ বর্বরোচিত ঘটনা ঘটিয়ে আসছেন অভিযুক্ত এই শিক্ষক। এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শাহীন শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসাধীন ওই শিক্ষার্থীদের ৫ জনকে শনিবার (৫ মে) দুপুরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল থেকে বিদ্যালয় ভবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, তাদের হাতে মাস শেষে হাজার হাজার টাকা তুলে দেই ছেলে মারার জন্য নয়। মাসের টাকা দিতে একদিন দিতে দেরি হলেই প্রতিষ্ঠান থেকে বারবার ফোন করে তাগাদা দেয়া হয়। ছাত্রদের খাবার বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু এতো বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও তারা আমাদের অবহিত করেননি। ঘটনা শুনে আমরা তাদের কাছে বাববার ফোন করলেও তারা তা ফোন রিসিভ করেননি। আমরা এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো। এ ব্যাপারে আবাসিক ভবনের একাধিক শিক্ষক বলেন, ঘটনা ঘটেছে ঠিকই। তবে এতো বড় ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের শাসন করতেই পারেন। তিনি ছাত্রদের সামান্য শাসন করেছেন মাত্র। এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল শাহীন শিক্ষা পরিবারের আবাসিক স্কুলের অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন আসলাম নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা বলে জানিয়েছেন তিনি।