তিন সিটি করপোরেশনে সরকারি দল আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করলেও ভোট গ্রহণপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় দলের ভেতরে একধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। মন্ত্রী, সাংসদসহ দলের জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম সারির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ করতে না চেয়ে দলের মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা এমন হয়ে যায়নি যে জোরজবরদস্তি করে নির্বাচনে জিততে হবে। একটা ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে দলের দু-একজন মেয়র প্রার্থী পরাজিত হলেও ক্ষতি ছিল না। বরং রাজনৈতিকভাবে দল সুবিধাজনক অবস্থায় থাকত। পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে দলের একটা সাংগঠনিক চিত্র পাওয়া যেত। কোনো দুর্বলতা থাকলে তা-ও চিহ্নিত হতো। কিন্তু সে সুযোগটা কাজে লাগানো গেল না। দলের সম্পাদকমণ্ডলীর দুজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতোই এ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে বলে তাঁরা আশা করেছিলেন। তাঁদের ধারণা ছিল, নির্বাচনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও শেষ পর্যন্ত তাঁরাই জয়ী হবেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নেতা বলেন, যে ধরনের নির্বাচন হলো, তা আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলের জন্য বেমানান। একজন জ্যেষ্ঠ সাংসদ বলেন, আওয়ামী লীগ আজীবন ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করেছে। কিন্তু তা প্রশ্নবিদ্ধ হলো। এর জন্য দলকে একদিন মূল্য দিতে হবে। কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, তিন সিটিতে ভোটে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হলেও রাজনৈতিকভাবে দল পরাজিত হয়েছে। প্রথমত, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় না বলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জোরেশোরে প্রচার করতে পারবে। একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বিশ্লেষণ ছিল, খালেদা জিয়া মাঠে নেমেও বিএনপি কর্মীদের চাঙা করতে পারেননি। দলটি অসংগঠিত ও বিশৃঙ্খল থাকায় ভোটের মাঠে সহজেই আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ব থাকবে। ফলে স্বাভাবিক নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা বেরিয়ে আসতে পারবেন। কিন্তু নির্বাচনে যে এতটা বাড়াবাড়ি হবে, তা তাঁদের ধারণার বাইরে ছিল। তবে আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। নিশ্চিত পরাজয় জেনেই আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করার জন্য বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। দলের আনুষ্ঠানিক ও একাধিক নেতার অনানুষ্ঠানিক বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার আগে কোথাও কোনো ঘটনা ঘটেনি, অনিয়ম হয়নি। বিএনপির বর্জনের পর বিক্ষিপ্তভাবে কিছু অনিয়ম হলেও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলর প্রার্থীরাই দায়ী। তাঁর মতে, বিএনপি পরিকল্পিতভাবে বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দেয়নি। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। আওয়ামী লীগের কয়েকজন সাংসদের মতে, কারচুপির অভিযোগ তুলে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করায় আবার রাজনৈতিক সংকটের অশনিসংকেত দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় সামনের রাজনৈতিক পথ বন্ধুর বলেই তাঁরা আশঙ্কা করছেন।