সাড়ে ৩ যুগের প্রত্যাশার পর বগুড়ার সান্তাহারে নির্মিত হচ্ছে স্বাধীনতা মঞ্চ
আদমদীঘি প্রতিনিধি : বগুড়ার সান্তাহার শহর মুক্তিযুদ্ধের শহর হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি আছে সারা দেশে। বিহারী (অবাঙ্গালী) অধ্যুষিত এই শহরটি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনের পর থেকে চলে যায় বিহারীদের নিয়ন্ত্রনে। কয়েক দিনের ব্যবধানে স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালীরা পাল্টা প্রতিরোধের মাধ্যমে নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। এতে প্রথম দফায় শহীদ হন স্বাধীনতাকামি নারীসহ অন্তত ৫ বাঙ্গালী। এর পর ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত শহরটি বাঙ্গালীদের নিয়ন্ত্রনেই ছিল। হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী প্রবেশ করার পর ফের বিহারীদের নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। শুরু হয় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, জ্বালাও-পোড়াও, লুটপাট ও ধর্ষন সহ মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহরটি বিহারী ও হানাদার বাহিনী মুক্ত হবার পর থেকে সবাই প্রত্যাশা করছিল শহরের দর্শনীয় স্থানে নির্মিত হবে স্মৃতিস্তম্ভ। কিন্তু গত ৪৪ বছরেও কেউ এগিয়ে আসেনি। জায়গা সংকটের অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে গেছে সবাই। শুধু স্মৃতি স্তম্ভই নয়, এই দীর্ঘ দিন ধরে রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভা সমাবেশ করার স্থায়ী জায়গাও নির্ধারণ করা হয়নি। রেল ভিত্তিক এই শহরের রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ের উত্তর ধারে থাকা সামরিক ট্রান্সশিফ ট্রাফ এর উপর সভা সমাবেশ করা হচ্ছিল। বিগত ১৯৯৭ সালের দিকে সান্তাহার জংশন স্টেশন এলাকার রেল লাইন ডুয়েলগেজে রুপান্তর করা হলে ওই স্থানে সামরিক ট্রানশিফ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে স্থানটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের পরোক্ষ সহায়তায় বেদখল হয়ে যায়। এর পর স্টেশন রোডের মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে রাজপথ বন্ধ করে দিয়ে সভা-সমাবেশ কার্যক্রম হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি দলের স্থানীয় কিছু নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী ও প্রগতিশীলমনা সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিক সমাজ ওই স্থানের উপর স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভ ও সভা মঞ্চ এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করে। ৩ এপ্রিল ওই স্থানে উত্তর ধারে স্বাধীনতা মঞ্চ ও স্তম্ভ এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মান কাজ উদ্বোধন করার মধ্য দিয়ে গত সাড়ে ৩ যুগের প্রত্যাশার বাস্তবায়ন শুরু করা হয়। এ কাজের উদ্বোধন করেন ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক গভর্ণর (জয়পুরহাট জেলা) ও এমপি কছিম উদ্দিন আহম্মেদ এবং ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম খান রাজু। বর্তমানে এই নির্মান কাজ চলছে পুরোদমে। পূরণ হতে চলেছে সাড়ে ৩ যুগ ধরে স্বাধীনতা স্বপক্ষের জনগনের লালিত প্রত্যাশা।