প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ : অপসারণের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্লাশ বর্জন

20150403_123238PPPPআবু সায়েম কালিহাতী (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার ২৫নং ফুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নূর মহল আক্তারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা অপসারণের দাবিতে ক্লাশ বর্জন করে বিক্ষোভ করেছেন। জানা যায়, নূর মহল আক্তার ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে ফুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকেই তাঁর মাঝে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, অসংগতি ও দূর্নীতির বিষয় পরিলক্ষিত হয়। তিনি স্লিপ কমিটির ৬০,০০০ (ষাট) হাজার টাকা দিয়ে ২০১২-১৩ সালে একটি কাঠের চেয়ার ও মনিটরিং বোর্ড এবং ২০১৩-১৪ সালে একটি ড্রাম সেট কেনেন । বাকী টাকা স্লিপ কমিটি থাকলেও তাদের পরামর্শ ও স্বাক্ষর ছাড়াই আত্মসাৎ করেন। । কাব দলের চাঁদা ৩য় থেকে ৫ম শেণি পর্যন্ত ২ টাকা হারে তোলার নিয়ম থাকলেও তিনি ১০ টাকা হারে উত্তোলন করেন এবং উদ্বৃত্ত টাকা আত্মসাৎ করেন। ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ফি বাবদ তিনি ১০০-২০০ টাকা আদায় করেন। কোন শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করলে টাকার বিনিময়ে তাদেরকে উত্তীর্ণ করে দেয়া হয়। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফিসের চেয়ে তিনি দ্বিগুণ ফিস আদায় করেন। সমাপণী পরীক্ষায় ডি.আর ৬০ টাকা হলেও তিনি জন প্রতি ১০০ টাকা করে আদায় করেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বলেন কম দিলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দিবেন না। প্রবেশপত্র বিতরণের সময় তিনি অতিরিক্ত ২৫ টাকা হারে আদায় করেন।20150403_12130299 এছাড়া তিনি শিশু শ্রেণির বরাদ্দ বাবদ দুই বার ৫হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা,পৌরসভার বরাদ্দ বাবদ তৎকালীন কাউন্সিলর এর নিকট হতে বেঞ্চ মেরামতের জন্য ৮ হাজার টাকা নিয়ে ৫শত টাকা ব্যয় করে বাকী টাকা আত্মসাৎ করেন। সমাপণি পরীক্ষার প্রশংসাপত্র,নম্বর ফর্দ ও সার্টিফিকেট নিতে গ্রামের দরিদ্র অভিভাবকদের নিকট হতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আদায় করেন। টাকা কম হলে কাগজপত্র আটকে রাখা হয়। এতে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্যে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। প্রধান শিক্ষিকা হওয়াতে তিনি সপ্তাহে ৩-৪ দিনের বেশি বিদ্যালয়ে আসেন না। আবার না এসে পরের দিন স্বাক্ষর করেন। তিনি বেশিরভাগ সময়ই শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করতে যান না। আবার গেলেও অধিকাংশ সময়-ই শ্রেণি কক্ষে মোবাইলে কথা বলেন। ২য় শ্রেণিতে তার ইংরেজী বিষয়ে পাঠদান করার নিয়ম রুটিন অনুযায়ী থাকলেও অফিসের কাজের অজুহাতে ক্লাশ না নিয়ে অফিসে বসে থাকেন। তিনি সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে উগ্র মেজাজে কথা বলেন। কারণ অকারণে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। তার অত্যাচারে সেচ্ছায় বদলি হওয়া শিক্ষক হাসান জানান, অকারণে তিনি আমার সাথে খারাপ আচরণ করতেন। অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করতেন। বাধ্য হয়ে আমি বদলি হয়ে এসেছি। তার বদলি হওয়াতে স্কুলের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী ক্লাশে আসছে না। বাকী শিক্ষক-শিক্ষিকার একই অভিযোগ। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা হাসান স্যারকে চাই। প্রধান শিক্ষিকাকে চাই না। প্রধান ম্যাডাম আমাদের দিয়া দুধ,ডিম আনান। আমাদের বাড়ির গাছের লেবু,জাম্বুরা আনতে বলেন। না আনলে গালমন্দ করেন। এছাড়া আমাদের দিয়ে মেইন রাস্তার পাশে অবস্থিত দোকানে মোবাইলে কথা বলার জন্যে ফ্লেক্সিলোড করতে পাঠান। এলাকার সচেতন নাগরিকরা মনে করেন খুব শিঘ্রই এই শিক্ষিকাকে অপসারণ না করলে ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ। এব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষিকা নূর মহল আক্তার জানান, আমি কোন অনিয়ম, দুর্নীতি করিনি। এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাকিয়া পারভীন জানান, এলাকাবাসী আগেই আমার কাছে অভিযোগ দিয়ে রেখেছেনে। ব্যস্ততার কারণে তদন্ত করতে পারিনি। তবে খুব শিগ্রই তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *