পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্র ইস্যুতে বিশ্ব ব্যাংক কর্মকর্তাদের শাস্তি হওয়া উচিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী
হারুনুর রশিদ, শেরপুর প্রতিনিধি : পদ্মা সেতু নির্মাণে ষড়যন্ত্র ইস্যুতে বিশ্ব ব্যাংক কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি করেছেন, আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে তার নির্বাচনী এলাকা শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে ওই দাবি জানিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নিয়ে বলেছিল, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি ও চুরি হয়েছে। অথচ আজকে আমাদের দেশের কোর্ট না, কানাডার কোর্টে প্রমাণিত হয়েছে বিশ্বব্যাংক সেদিন মিথ্যা বলেছিল। ওই প্রকল্পে কোন চুরি হয় নাই, দুর্নীতিও হয় নাই। তিনি বলেন, সেদিন যারা এমন মিথ্যা সাজিয়েছিল, মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল, সেই মানহানীর জন্য বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তির বিধান করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাধীনতার প্রশ্নে ত্যাগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, রক্ত যদি স্বাধীনতার দাম হয়, তাহলে বাংলাদেশ বেশি দামে সেই স্বাধীনতা কিনেছে। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আমাদের সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কত লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন সেই হিসাব বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জানেন না। এমনকি ৩০ লাখ মানুষ যে মারা গেছেন- এটাও তিনি মানেন না। যুদ্ধের সময় যারা মা-বাবা হারিয়েছেন তারাই স্বাধীনতার মর্ম বুঝেন।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, পাকিস্তানিরা তাদের স্বার্থের জন্য বৃটিশদের পা চাটেন। কিন্তু বাঙালিরা লড়াকু জাতি, তারা পা চাটেন না, লড়াই করেন। যুদ্ধের সময় খান সেনারা মৃত বাঙালিদের দেহের উপর দিয়ে ট্যাংক চালিয়ে রক্তের বন্যা বইয়েছেন। ওই সময় যারা জীবিত ছিল তাদের দিয়ে কবর খুড়িয়ে মৃতদের কবর দেওয়া হয়েছে। পরক্ষণে খান সেনারা হাসতে হাসতে জীবিতদের ব্রাশফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যাও করেছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ৪০ লক্ষ টন ও ২০০৯ সালে ২৬ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এখন আল্লাহর রহমতে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। আমরা নেপালের ভূমিকম্পের সময় ও শ্রীলংকায় সাহায্য পাঠিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরিব-অসহায়দের কথা চিন্তা করে অভাবের সময় প্রতিজনকে ৫ মাস ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল দিচ্ছেন। তিনি দেশের জন্য যে কোন চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন। মন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে দুর্বৃত্তরা প্রায় মেরেই ফেলেছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে গ্রেনেডের পিন না খুলতে পারায় তিনি প্রাণে বেচেঁ যান। বিএনপির সময় উন্নয়ন না হয়ে যে গিট লেগেছিল সেই গিট খুলে খুলে শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। সকল ষড়যন্ত্র ভুল করে পদ্মা সেতু আজ নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে।
কৃষিমন্ত্রী জঙ্গীবাদ সম্পর্কে বলেন, ইসলাম কোন নিরীহ মানুষকে হত্যার অনুমতি দেয়নি। এরা ইসলামের নামে মানুষ মারে, নারীকে পণবন্ধি করে –শিশুকে পণবন্ধি করে। ইসলামে যা জায়েজ নেই তারা তাই করছে। জঙ্গীর পথ অন্যায়ের পথ, গুমরার পথ, ভুল পথ। কাজেই ওই পথ ত্যাগ করে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা উচিত।
নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পুলিশ সুপার রফিকুল হাসান গণি, নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম মুখলেছুর রহমান রিপন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরফদার সোহেল রহমান, খামারবাড়ীর উপ-পরিচালক মোঃ আশরাফ উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিন মন্ত্রী উপজেলার ১২টি ইউনয়ন ও একটি পৌরসভার ২১৭ টি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, দাবাসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করেন।