আদমদীঘিতে গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহে মহা ব্যস্ত সময় পার করছে

pic-01-11-16-2
আদমদীঘি প্রতিনিধি : হেমন্তের কালের এই মধ্য প্রান্তে শীত মৌসুমের আগমনী বার্তায় বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার গ্রাম গঞ্জে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা গাছ ঝুরে প্রস্তুতি নিতে মহা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আশ্বিন পেরিয়ে কার্তিক মাসে শীতের অনুভব হতেই প্রতি বছরের মত এবারও গাছিরা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে খেজুর গাছের মালিকদের সাথে চুক্তি করে গাছ তৈরী শুরু করেছে।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, পতিত জমি, ভিটা,জমির আইলে সহ বিভিন্ন জায়গায় খেজুর গাছ রয়েছে। এসব খেজুর গাছ রোপন না করলেও এমনিতেই হয়েছে। এক সময় এই উপজেলায় প্রচুর খেজুর গাছ ছিল। খেজুর গাছের কাঠ দিয়ে কোন আসবার পত্র তৈরী না হওয়ায় অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তার পড়েও গ্রামঅঞ্চলে এখনও প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। উপজেলার পল্লী গ্রামের মাটির ঘরে তীর হিসেবে খেজুর গাছ আজও ব্যবহার করছে অনেকে। শীত মৌসুমে খেজুর রস অহরন হয়। আর এই আশায় গাছিরা রস সংগ্রহের অপেক্ষায় থাকে। অগ্রহায়ন মাসে নতুন ধান ওঠে প্রতিটি ঘরে। নতুন ধানের চালের গুড়া দিয়ে খেজুর রস ও গুড় দিয়ে পিঠা -সাপটা তৈরীর ধুম পড়ে গ্রাম গঞ্জ গুলোতে। বছরে একবার শীত মৌসুমে খেজুর গাছ রস দেয়। এই রস গাছিরা গাছ থেকে অহরন করে বড় পাত্রে ঢেলে চুলাই আগুনে জাল দিয়ে লালি,দানাদার ও পাটারী গুড় তেরী করে। গুড়ের স্বাদ ও গদ্ধে ভরে ওঠে সকলের মন। উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের গাছি, ইয়াচিন সরদার,বন্তইর গ্রামের সুকুমার চন্দ্র,জিনইর গ্রামের টুয়েল,বশিকোড়া গ্রামের আব্দুস সালাম,মালসনের ওসমান সহ বেশ কিছু গাছিরা জানান,গত কয়েক বছর আগে যে পরিমান খেজুর গাছ ছিল বর্তমানে তা আর নেই। তার পড়েও যা আছে তা একেবারে কমও না। শীত শুরু হলেই গাছে রস আসে। আর সে কারনেই শীতের আগাম বার্তা আসা মাত্র বিশেষ করে কার্তিক মাসে আমরা গাছ তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। গাছিরা আরো জানান,অগ্রহায়ন থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত (তিন মাস) খেজুর রস অহরন করা হয়। সপ্তাহের দুই থেকে তিন দিন রস সংগ্রহ বন্ধ রাখা হয়। এ ফলে গাছের রস ভাল হয়। গাছের মালিকদের তিন মাসে দশ কেজি করে গুড় দিতে হয়। রস থেকে তৈরী গুড় গাছিরা বাজারে বিক্রি করে লাভবান হয়ে থাকে। গাছিরা তিন মাসে একটি গাছের রসের গুড় বিক্রি করে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা রোজগার করে থাকে। গ্রামের মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠে চাদর মুরি দিয়ে কাাঁপছে আর খেজুর রস ও মুড়ি এক সঙ্গে নিয়ে শীতের রসালো সাধ অনুভব করে থাকে। এ ছাড়া প্রতিটি ঘরে নতুন চালের আটা আর খেজুর গুড়ের পিঠা-সাপটার খাওয়ার ধুম পড়ে। আর শুরু হয় শীতের পিঠা তৈরী করে জামাই-মেয়ে আপ্যায়ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *