প্রতীক হাতে ভোটারদের দুয়ারে
ঢাকা: সময় বাকি আর মাত্র ১৮ দিন। প্রতীক বুঝে পেয়েছেন সবে।তবে এর আগে থেকেই নির্বাচনী প্রচারণায় দিন-রাত এক করে ফেলছেন ঢাকার মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। ক্ষণেক্ষণে নির্বাচনী আচরণবিধির কিছুটা লঙ্ঘন হলেও, তা খুব একটা গায়ে মাখছেন না প্রার্থীদের। তাদের একটাই চেষ্টা- ২৬ এপ্রিল রাত ১২টার মধ্যে সব ভোটারের কাছে আর্জি নিয়ে পৌঁছানো।
শুক্রবার ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- সব প্রার্থীই নিজ নিজ এলাকায় জুমার নামাজ আদায় করে প্রার্থীদের কাছে নিজেদের প্রতীক জানিয়ে দোয়া আর ভোট চেয়েছেন।
প্রতীক সম্বলিত লিফলেট কিংবা পোস্টার এখনো না পেলেও তাদের হাতে ছিল প্রতীকের ডামি। সঙ্গে সমর্থকদের স্লোগান। প্রার্থী ছাড়াও অনেক স্থানে সমর্থকদেরও মিছিল নিয়ে বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করতে দেখা যায়।
প্রার্থীদের আরেকটি ব্যস্ত দিন
প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা। শুক্রবার সকালে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর দুই সিটি করপোরেশনের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। এখনো প্রতীক সম্বলিত পোস্টার কিংবা লিফলেট দেখা যায়নি। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীদের শুভেচ্ছা পোস্টার নজরে এসেছে। ২৬ মার্চ ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তারা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ভোটারদের।
এলাকায়-এলাকায় জনসংযোগের মাধ্যমে ভোটারদের সমর্থন চেয়েছেন দুই করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীদের কেউ কেউ। তবে, লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি না হওয়ার অভিযোগও করেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।
শুক্রবার সকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক উত্তরার বেশ কয়েকটি এলাকায় জনসংযোগ করেন। এসময়, ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। আসন্ন ভোটে নাগরিকরা তাকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে বিজয়ী করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন আনিসুল হক।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর খিলক্ষেতে লোটাস কামাল টাওয়ারের ‘তারুণ্যের চোখে কেমন ঢাকা চাই’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন আনিসুল হক। সেখানে তিনি দল সমর্থিত প্রার্থীর প্রচারণায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মাঠে নামলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামেন, তাহলে কি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে? তবে তিনি মাঠে থাকলে শক্ত একটা যুদ্ধ হবে।’
এছাড়া সকালে অনলাইন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘আমরা ঢাকা’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘তারুণ্যের চোখে ঢাকা’ শীর্ষক মতবিনিময় অনুষ্ঠান।এতে বাছাইকৃত একশ তরুণ অংশ নেয়।তাদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন আনিসুল হক।
নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘অনেক দিন পরে হলেও বিএনপি নির্বাচনে এসেছে।এজন্য তাদের স্বাগত জানাই।’ আগামীকাল শনিবার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করবেন বলেও জানান তিনি। এ ইশতেহারে চমক থাকছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে বিএনপি সমর্থিত উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে জনসংযোগ করেছেন। এর আগে তিনি একই এলাকার হযরত আম্বর শাহের মাজার জিয়ারত করেন।
প্রচারণাকালে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘মাত্র তো কাজ শুরু করেছি। আশা করি, নির্বাচন কমিশন সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করবে। ২০ দল ও সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছি। জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’ তরুণদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকার কাজে আনিসুল হককেও আহ্বান জানান তিনি।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে শুক্রবার এজিবি কলোনী ও কমলাপুর এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। তিনি প্রচারণায় দলীয় নেতাকর্মীদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হয়রানি করছে বলে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন। আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘মির্জা আব্বাসের পক্ষে নেতাকর্মীরা প্রচারণায় নামলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নানাভাবে হয়রানি করছেন। এতে আমাদের প্রচারণায় বিঘ্ন ঘটছে।’
এর পাশাপাশি দক্ষিণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকন পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জনসংযোগ করেন। তবে উত্তরে বিকল্প ধারার প্রার্থী মাহী বি চৌধুরী শুক্রবার কোনো প্রচারণা চালাননি বলে জানিয়েছেন তার প্রচার কমিটির প্রধান জাঙ্গাগীর আলম। তিনি বলেন, ‘শনিবার থেকে মাহী বি চৌধুরী আনুষ্ঠানিক প্রচারণা করবেন। আর আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী সাঈদ খোকন শুক্রবার বিকেলে লালবাগের নবাবগঞ্জ বড় মসজিদ থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। তিনি ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ডের ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করেন।