সাপাহার-পোরশায় আম চাষে নিরব বিপ্লব, সংরক্ষনাগার-জুস ফ্যাক্টরীর স্থাপনের দাবী

photo,sapahar,14-05-2016 (mango)
নয়ন বাবু, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: দেশের আমের রাজধানী নামে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে জায়গা দখল করে নিয়েছে নওগাঁর জেলার সাপাহার ও পোরশা উপজেলা। ইতোমধ্যেই এ দু’উপজেলার আম দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা হয়েছে। সাপাহার-পোরশায় এবারে আমের বাম্পার ফলনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও এখানে আম সংরক্ষনের তেমন কোন ব্যাবস্থা না থাকায় আম ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেটের দর পতনের আশংকায় শঙ্কিত এখানকার আম চাষীরা।
জেলার সাপাহার-পোরশা উপজেলার মাটি আম চাষের বিশেষ উপযোগী হওয়ায় বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে আম চাষের নিরব বিপ্লব ঘটেছে এই দু’উপজেলায়। এখানে সাধারণত হাইব্রিড জাতের আমরুপালী, চষা, মল্লিকা, বারী (৪) বারি (৩) দেশীয় জাতের মধ্যে ফজলী, সুরমা ফজলী, নাগ ফজলী, নেংড়, গোপাল ভোগ, খিরসা পাতি, মহন ভোগ সহ বিভিন্ন জাতের সুমিষ্ট আম চাষ হয়ে থাকে। আমের মৌসুমে প্রতিদিন শত শত টন আম এ এলাকা থেকে দেশের রাজধানী সহ বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী হয়ে থাকে এমনকি গত বছর আমের মৌসুমে পোরশা উপজেলার ঘাটনগর এলাকা হতে স্বপ্নের দেশ আমেরিকাতেও বারী (৪) জাতের আম রপ্তানী করা হয়েছিল। এবারে আমের মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্ব থেকে উপজেলা সদরের আম পট্টিতে আমের আড়তগুলির যতেœর ধুম পড়েছে শত শত শ্রমিক এখন হতেই বিভিন্ন কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার বিশিষ্ট আম ব্যাবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম মানিকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও ভাল ব্যাবসার আশা করছেন তিনি। তার আড়তে প্রায় ২৫জন শ্রমিক কাজ করে থাকে। সে হিসেবে আমের আমদানীও হয়ে থাকে প্রচুর। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আমের বাম্পার ফলনে আমচাষীদের মুখে হাসি ফুটবে বলে একাধীক আমচাষী জানিয়েছেন।
এ দু’উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারে উপজেলা দ্বয়ে প্রায় ১০হাজার ৫শ’ হেক্টর বা প্রায় ৮০হাজার বিঘা জমিতে হাইব্রিড সহ বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয়েছে এবং আমের উৎপাদন প্রতি হেক্টরে ১০টন হিসেবে প্রায় ১ লক্ষ ৫ হাজার টন বা প্রায় ৩০ লক্ষ মন আম উৎপাদন হবে। যা দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা মিটিয়েও দেশের বাহিরে রপ্তানী করা সম্ভব। অন্যান্য বছরের মত এবারেও ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেটর মাধ্যমে দর পতনের ফলে আম চাষীরা লাভের তুলনায় লোকশানের মধ্যে পড়বে কিনা সে চিন্তা এখন থেকেই তাদের মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে। এছাড়া বরেন্দ্র ভূমির সীমান্তবর্তী এ এলাকায় যথাযথ প্রচারণার অভাব, সংরক্ষন ও প্রক্রিয়াজাতকরনে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাবস্থা না থাকায় ব্যক্তিগতভাবে আম চাষীরা এবং সামষ্টিকভাবে দেশীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দ্রুত এ সমস্যা নিরসনে সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ভূঁঞা স্থানীয় জনগন ও আমচাষীদের ভাগ্য উন্নয়নে উপজেলায় ১টি হিমাগার এবং ১টি জ্যাম-জ্যালী বা জুস ফ্যাক্টরী স্থাপনে প্রাইভেট বা পাটনার শীপ অথবা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে অথবা সরকারী ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাহী চেয়ারম্যান বিনিয়োগ বোর্ড ঢাকা ও পরিচালক রাজশাহী বিভাগীয় বিনিয়োগ বোর্ড সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন।
এলাকাবাসীর এখানে আম উৎপাদনের এই নীরব বিপ্লবকে সরব বিপ্লবে পরিণত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *