বাউন্ডারি ওয়াল ও সিঁড়ি নির্মাণসহ শিক্ষক নিয়োগের দাবি রুমা বাজার আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নানান সমস্যায় জর্জড়িত।
শৈহ্লাচিং মারমা, রুমা(বান্দরবান) : প্রতিষ্ঠার ৫১ বছর পরও রুমা বাজার আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নানান সমস্যায় জর্জড়িত। বিদ্যালয়ের সম্মুখভাগে কোনো পাকা বাউন্ডারী ওয়াল নেই। অথচ বিদ্যালয়ের সম্মুখ পাশ দিয়ে চিপা ব্যস্ততম যানচলাচলের রাস্তা। এঅবস্থায় প্রতিদিন শত শত কচি-কাঁচা শিশুদের দুর্ঘটনায় প্রাণ নাশের আশঙ্কা থেকেই থাকে। এ বিপদ সংকুল অবস্থা থেকে কোমল-মতি শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের দাবি করছে এলাকাবাসীর।
বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে এলাকার শিক্ষানুরাগিদের উদ্যোগে বিদ্যালয়টি ১৯৬৫সালে প্রতিষ্ঠা । পরবর্তীতে জাতীয় করণ করা হয়। এখন বিদ্যালয়টির বয়স ৫১বছর। বিদ্যালয়টি ২০বছর আগে রুমা বাজার আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এর পর থেকে ক্যাচমেন্ট এলাকা ছাড়াও পুরো উপজেলার বিভিন্ন এলাকা হতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির চাপ প্রতি বছর বাড়তে থাকে। ফলে এবছর প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী প্রায় ৯০০জন। এর মধ্যে খন্ডকালীন ২জন শিক্ষকসহ মোট ৮জন শিক্ষক কর্মরত। এখান থেকে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষক একজন গত জানুয়ারী থেকে সিএইনএ্যাড প্রশিক্ষণরত আছেন। বাকী ৭জন দিয়ে পাঠদান করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। অভিভাবক চথোয়াইঅং মারমা ও রতন দাশ বলেন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক আছে খুবই কম। কম শিক্ষক দিয়ে এতোজন শিক্ষার্থীকে পাড়ানোয় পড়ালেখার মান নিয়ে উদিগ্ন অভিভাবক রুইবেঅং মাষ্টার ও দাভিদ বম। এঅবস্থায় পড়ালেখার মান স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যালয়ে আরো নতুন পদ সৃষ্টি কওে নতুন শিক্ষকের নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় লোকজন।
বিদ্যালযটি সংকটে আছে- বিদ্যালয়ে শ্রেণি কক্ষও । এঅবস্থায় একটি কক্ষে আলমিরা ও টেবিল দিয়ে প্যাটিশন করে শিক্ষকদের কনফারেন্স ও প্রধান শিক্ষকের কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া আরেকটি শ্রেণি কক্ষে প্যাটিশন দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিস্কুট মজুদ রাখা হয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুপাতে কক্ষ আরো ছোট হয়ে যায়। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চাপা-চাপিতে বসে ক্লাশ করছে। এতে অনেকে পাঠ গ্রহণে অমনোযোগি হতে পারে বলে অভিভবকরা অসন্তোষ প্রকাশ করছে। অভিভাবক মিয়ইনু মারমা ও মেসেমা মারমা বলেন শ্রেণি কক্ষে বসার আসন কম আছে। এজন্য বাড়ির আনুষাঙ্গিক কাজ ফেলে প্রতিদিন ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পৌঁিছয়ে দিয়ে আসতে হয়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান গেল ৪বছর আগে উর্দ্ধমুখি সম্প্রসারিত ভবনে কোনো সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়নি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি উদ্যোগে গাছ দিয়ে সিঁড়ি করে দ্বিতল উঠা-নামা ব্যবস্থা করে নেয়। তাও এখন ভাঙ্গা-চোড়া অবস্থা। গাছের সিঁড়ি মঁিচয়ে যাওয়ায় তা ভেঙ্গে শিক্ষক শিক্ষার্থী যেকেউ দুর্ঘটনা শিকারে আশঙ্কা রয়েছে। এব্যাপারে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
তারা আরো জানান উর্দ্ধমুখি সম্প্রসারিত ভবনে কয়েক বছর যাবত কোনো প্রকার সংস্কার না করায় বর্ষায় ছাদ থেকে পানি চুষে পড়ে। এতে শ্রেণি কক্ষে স্বাভাবিক পাঠদান বিঘœতা ঘটায়।
প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন চাকমা বলেন অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজনসহ সমস্যা অনেক। এ বিদ্যমান সমস্যা সমাধান কল্পে পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কাছে নিবেদন জানিয়ে আবেদন করা হয়েছে। আনন্দঘন পরিবেশে শিশু সুরক্ষাসহ নিরাপদ ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকের পদ নতুনভাবে সৃষ্টি করে ১৬টিতে উন্নীত করতে আবেদন জানানো হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার(০২-০৩-১৬) দুপুরে বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা বলার সময় তিনি এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এবিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রধান শিক্ষক আরো বলেন পিএসসি পরীক্ষায় ১২৮ জনের মধ্যে অনুপস্থিত শিক্ষার্থী ছাড়া সবাই পাশ করেছে। ঠিক একইভাবে জেএসসি পরীক্ষাও শতভাগ উত্তীর্ণ হয়। তবে চলতি বছর শিক্ষার্থী বাড়ার কারণে শিক্ষক বাড়ানো খুবই যৌক্তিক বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেযারম্যান জিংসমলিয়ান বম বলেন মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়টির শিক্ষারমান বিবেচনা করে সংযুক্তিতে শিগগিরই শিক্ষক বাড়ানো হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান অংথোয়াইচিং মারমা বলেন এ বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী স্থান ঘোনা পাড়ায় চিত্তরথ-কাসেম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আগামি বছর থেকে চালু হতে যাচ্ছে। সেটি চালু হলে আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট ও শিক্ষার্থী ভর্তি চাপ কোনটাই আর থাকবেনা বলে মনে করেন তিনি।