এবার ঝিনাইদহ প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরে ব্যাপক ঘুষ বানিজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয়ছয় !
জাহিদুর রহমান তারিক : ঝিনাইদহে জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে দুর্নীতি জেকে বসেছে। শিক্ষক নেতাদের চাপে রেখে জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিভিন্ন খাতের সরকারী বরাদ্দ ভাগাভাগী করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিও) আতাউর রহমান ও সদর থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মাসুদ করিম (টিও) ১৬ লাখ টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির বিষয়ে কোন শিক্ষক উচ্চবাচ্য করলে সার্ভিস বুকে লাল কালি মারার হুমকি দেয়। এ কারনে কোন শিক্ষক প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আদায়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে আইনাল হোসেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, নিয়োগ বা পোষ্টিংয়ের জন্য জেলা অফিসারকে ৫ থেকে ১০ হাজার, বদলীর জন্য ২০ থেকে ৩০ হাজার, পেনশনের জন্য ৫ হাজার ও পিআরএল এর জন্য ২ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়। আইনাল হোসেন শিক্ষকদের কাছ থেকে এই টাকা আদায় করেন বলে কথিত আছে। এদিকে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান গত ৭ (এপ্রিল থেকে) মাস ধরে বিধি বর্হিভুত ভাবে অফিসের তিন রুম দখল করে বসবাস করছেন। কোন বাসা ভাড়া কাটেন না। অথচ বেতনের ৩০% বাসা ভাড়া কাটার নিয়ম রয়েছে। সরকারী তেল পুড়িয়ে মহিলা শিক্ষকদের নিয়ে লংড্রাইভ করার গুজব রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে রয়েছেন উচ্চমান সহকারী কাজল। প্রতিটি খাত থেকে ১০% করে ঘুষ আদায় করে তিনি ডিপিও ও টিওকে দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক কয়েকজন প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকারা জানান, সমাপনী পরীক্ষার ডিয়ার কল বাবদ নিয়মনীতি ভঙ্গ করে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদ করিম ৮ হাজার ৪৩৫ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১ টাকা করে ৮৪৩৫ টাকা আদায় করেন। বঙ্গবন্ধু কাপ থেকে আয় হয়েছে ৯১ হাজার ৪০০ টাকা কিন্তু ব্যয় দেখানো হয়েছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বাকী ৬০ হাজার টাকার কোন হিসাব নেই। প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ৫০০ টাকা করে ২১৪ টি বিদ্যালয় থেকে ১ লাখ ৭ হাজার টাকা, স্লিপ (উন্নয়ন খাত) কর্মসুচি থেকে ৭০০ টাকা করে ২১৪ টি বিদ্যালয় থেকে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮০০ টাকা, ক্ষুদ্র মেরামত (২০ হাজার টাকা পর্যন্ত) ৫৬টি বিদ্যালয় থেকে ২০০০ টাকা করে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা, ক্ষুদ্র মেরামত (৩০ হাজার পর্যন্ত) ৬০টি বিদ্যালয় থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ক্ষুদ্র মেরামত (৪০ হাজার পর্যন্ত) ৫০টি বিদালয় থেকে ৪,০০০ টাকা করে ২ লাখ টাকা, ক্ষুদ্র মেরামত ( এক লাখ) ২৪টি বিদ্যালয় থেকে ৫০০০ টাকা করে এক লাখ ২০ হাজার টাকা, প্রতি শিক্ষকের বই ফি সিশন ২০০টাকা করে ১০০০ শিক্ষকের নিকট থেকে ২ লক্ষ টাকা, প্রধান শিক্ষকদের নিকট থেকে উচ্চতর বেতন স্কেল বাবাদ ৮০ জনের নিকট থেকে ৬০০ হাজার টাকা করে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছেন। হিসেবে মতে গত ৬ মাসে বিভিন্ন খাত থেকে আনুমানিক ১৬ লাখ টাকার ঘুষ বানিজ্য ও সরকারী অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরেজমিন কয়েকটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে স্লিপ খাতসহ বিভিন্ন মেরাতম খাতের টাকা আত্মসাতের প্রমান পাওয়া গেছে। শিক্ষকরা অটপকে স্বীকার করেছেন টাকা তুলতে গিয়ে তাদের নির্দ্দিষ্ট অংকের ঘুষ দিতে হয়েছে। সার্ভিস বুকে লাল কালি পড়ার ভয়ে কোন শিক্ষই এ বিষয়ে টু-শব্দ করেন না বলে তাদের অভিমত। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মাসুদ করিম জানান, শিক্ষকদের স্কুলমুখি করার কারণে কিছু শিক্ষক তার উপর ক্ষুদ্ধ। তারাই এ সব মিথ্যা বানোয়াট তথ্য সরবরাহ করছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমানের সাথে সাক্ষাত করতে তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায় নি। তবে মোবাইল ফোনে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলবেন বলে জানান।