“মৎস্য কোম্পানীর” মালিকদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আকুল আবেদন পুসকৃত বাগধা, গলদা চিংড়ী মাছ ক্রয় থেকে বিরত থাকুন। দেশের ইজ্জত ও মৎস্য সম্পদ রক্ষা করুন। আপনাদের হাতেই সবকিছু।
ষ্টাফ রিপোর্টার ও দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিনিধি : বাংলাদেশের বর্তমান সম্পদের মধ্যে চিংড়ী সম্পদটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য। এই চিংড়ী মাছ থেকে সরকার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা পেয়ে থাকেন। আন্তর্জাতিক বাজার গুলিতে বাংলাদেশের চিংড়ি ছিল সকল ইউরোপিও দেশসহ এশিয়া মহাদেশে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য। আজ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের নীল নকসার কারণে প্রতি বছর বৈদেশিক অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমাদের দেশ। একদিকে হারাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে দেশের সুনাম । আর এ জন্য দায়ী আশেপাশের দেশগুলির ব্যবসায়ী ও মার্কেটিং অফিসারদের নীল নকসা। দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতে চলেছে ঠিক তখনই তাদের নীল নকসার বেড়াজালে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার সংকল্প নিয়ে বাজারে ‘পুস’ ব্যবস্থা চালু করিয়ে সার্থক হচ্ছে এই দেশটির অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হওয়ার চিন্তা চেতনা। বর্তমানে প্রায়ই দেখা যায় চিংড়ী মাছের বিভিন্ন ধরণের নোংরা অস্বাস্থ্যকর পানি ও অখাদ্য পুস করে মাছ শিল্পকে ধ্বংস করতে চলেছে। কারা এই পুস প্রথাকে সমর্থন করেন। সরজমিনে বিভিন্ন স্থানে তথ্য সংগ্রহ করতে যেয়ে এই প্রতিবেদকে নানান সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়েছে। তবুও অনেক কষ্টে এর সমুদয় কারণগুলি চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। এই চিংড়ি শিল্পটির কয়েক ধাপ মাছ উৎপাদিত হয় খুলনা বিভাগের মিষ্টি ও লবণাক্ত অঞ্চলগুলিতে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশী গলদা চিংড়ী উৎপাদিত হয় খুলনা বিভাগের যশোর, নড়াইল, ফরিদপুর, বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন অঞ্চল গুলিতে আর চিংড়ী উৎপাদিত হয় খুলনা বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলা গুলিতে এর মধ্যে চালনা, দাকোপ, মংলা, পাইকগাছা, কয়রা উপজেলাগুলিতে। আর সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ, দেবহাটা, পারুলিয়াসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে একটি সময় এই সকল অঞ্চলগুলির ৫০ বিঘা অথবা ১০০ বিঘার যে কোন চিংড়ী প্রজেক্ট থেকে প্রতি অমাবস্যা ও পূর্নিমার সময় শত শত মন চিংড়ি উৎপাদিত হতো, এই সকল মাছের প্রজেক্ট গুলিতে বর্তমান সময় কোন মাছ নেই বললেই চলে। যদিও যা পাওয়া যাচ্ছে তা তুলনা মূলকভাবে বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীদের কারনে আন্তর্জাতিক বাজার গুলিতে মান হারিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিকভাবে নিম্নে চলে যাচ্ছে। এখানে কিছু বিষয় দৃষ্টি আনা আবশ্যক বিভিন্ন অঞ্চলের গলদা ও বাগধা চিংড়িগুলি ছোট ছোট সাবসেন্টার (ডিপো) গুলি থেকে কোম্পানিতে আসে, কোম্পানিগুলি এশিয়া, ইউরোপসহ বিশ্বের অনেকগুলি দেশ রপ্তানি করে। দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাদেরকে সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করে থাকে। কিন্তু কোম্পানিগুলি এই সকল সাবসেন্টার (ডিপো) গুলিতে নোটিশ আকারে বা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুসকৃত বাগধা ও গলদা চিংড়ী ক্রয় না করলে এই সকল অসাধু ব্যবসায়ীদের মার্কেট থেকে হাত পা গুটিয়ে চলে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকবে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে থানা পর্যায়ের স্যানেটারী কর্মকর্তা ও মৎস্য কর্মকর্তাদের উদাশিনতার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করে মার্কেটগুলির বদনাম করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। সরেজমিনে দেখা যায় পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি বাজার, শামুকপোত বাজার, সোলাদানা বাজার, আলমতলা বাজার, লক্ষীখোলা বাজার, বাঁকা বাজারসহ অঞ্চলের অনেক সাবসেন্টার (ডিপু)তে বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক দ্রব্যাদি পুস করে পাইকগাছা, চুকনগর ও সাতক্ষীরার কোম্পানীর এজেন্ডার ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানীতে প্রেরণ করে থাকে। বহুবার কোষ্টগার্ড, র্যাব ও পুলিশ সদস্য হাতেনাতে এই সকল পুসকৃত মাছগুলি ধরে মোটা অংকের টাকা জরিমানা ও মাছ ধ্বংস করে ফেলে দেওয়া সত্ত্বেও পুসকৃত বাগদা ও গলদা চিংড়ি বাজার হয়ে চলেছে। এখানে একমাত্র বড় বড় নামিদামী মাছ কোম্পানীগুলি যদি প্রজ্ঞাপন ও বিধিমালা তৈরী করে সকল মার্কেটগুলিতে চিঠি অথবা প্রচারপত্র ব্যবহার করে তাহলেই পুস প্রথা বন্ধ হওয়া সম্ভব। কারণ দেখা যায় ছোট ছোট মাছের আড়ৎ থেকে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী মাছা ক্রয় করে নদীতে ও বিভিন্ন বাসাবাড়ীতে বসে এই সকল অখাদ্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি পুস করে বড় বড় কোম্পানী গুলিতে চোরাইভাবে বিক্রয় করে আসার কারণে অনেক কোম্পানীগুলি বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে দেখা যায়। বিগত ২০১৫ নভেম্বরের ১ম সপ্তাহের পর থেকে মাছ কোম্পানীগুলি গলদা চিংড়ি ক্রয় না করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং কিছু আলটিমেটাম প্রদান করে। তার মধ্যে পুস প্রথার কথা শোনা যায়। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় যে, অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে কোম্পানীগুলি এতই আস্থাশীল যার কারণে তাদের দাবী-দাওয়া মেনে পুস প্রথার প্রতি সমর্থন জানিয়ে পুণরায় চলতি ২০১৫ এর ডিসেম্বর থেকে মাছ ক্রয় করা শুরু করে। এখানে কোম্পানীগণ দেশের কথা না ভেবে অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির সহযোগীতায় লিপ্ত রয়েছে বলে সকলের ধারণা। তাহলে আমরা কি ভেবে নেব পুস প্রথা আদৌ বন্ধ হবে কি ? আমরা ভেবে নেবো কি কোম্পানীগুলি দেশ ও সরকারের সুনাম রক্ষা করতে চান না?