টাঙ্গাইল-৪ উপ-নির্বাচন নির্বাচনের আমেজ নেই ভোটারদের মাঝে

এ কিউ রাসেল, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর থেকেই টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচনের আমেজ অনেকটা শেষ হয়ে গেছে। কাদের সিদ্দিকী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষনা দেয়ার পর সাধারন ভোটারদের মাঝে যে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছিল তা এখন আর লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নির্বাচনে এমপি পদে সরকারদলীয় প্রার্থী হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ধরা হয়েছিল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকীকে। জমজমাট একটা নির্বাচনের আশাও করেছিল সাধারণ জনগন। কিন্তু কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়ন ঋণখেলাপির অভিযোগে বাতিল হওয়ায় ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু হওয়া এ নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ অনেকটা নীরব। কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ার আশঙ্কায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চারজন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। অন্যরা হলেন স্ত্রী নাসরীন কাদের সিদ্দিকী, দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল সিদ্দিকী ও কালিহাতী উপজেলা শাখার সভাপতি হাসমত আলী। তবে নাসরীন কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়ন ঋণখেলাপির অভিযোগে বাতিল হলেও এখনো নির্বাচনে আছেন ইকবাল সিদ্দিকী ও হাসমত আলী। কিন্তু তারা নির্বাচনের মাঠে কাদের সিদ্দিকীর স্থান দখলে অনেকটা ব্যর্থ হয়েছেন। কাদের সিদ্দিকী না থাকায় সাধারণ ভোটাররাও ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলে এ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তারপর থেকেই কালিহাতীতে বইতে শুরু করে নির্বাচনী আমেজ। বিএনপি এ নির্বাচনে না থাকলেও কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেন। এতে নির্বাচনে যোগ হয় ভিন্ন মাত্রা। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নামেন। বিএনপি’র একটি অংশ গোপনে সমর্থন দেন কাদের সিদ্দিকীকে। ফলে মনোভাব আরো চাঙ্গা হয় তাঁর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে টিকে থাকতে পারলেন না বীর এ মুক্তিযোদ্ধা। অগ্রণী ব্যাংকে ১০ কোটি ৮৮ লাখ ২৬ হাজার ৪১০ টাকার ঋণখেলাপির অভিযোগে গত ১৩ অক্টোবর মঙ্গলবার কাদের সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী নাসরীন কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান। এর প্রতিবাদে ওই দিন দুপুরে দলের নেতাকর্মীরা টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে অবরোধ করে। তারা রাস্তার ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ করে বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পথচারীসহ আহত হয় অন্তত ১৫ জন। পরে কাদের সিদ্দিকী সেখানে গিয়ে নেতাকর্মীদের শান্ত করেন এবং অবরোধ প্রত্যাহার করতে বললে তারা সেখান থেকে চলে যান। এ সময় কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকার পরও যদি বর্তমান সরকারের কালিহাতী আসন দরকার হয়, তাহলে আমাকে বললে এমনিতেই দিয়ে দিতাম। জালিয়াতি করে মনোনয়ন বাতিল করার দরকার ছিল না। আমার মনোনয়ন বাতিল করা হলেও গামছা মার্কার দুই প্রার্থী এখনো আছে।’ কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার প্রতিবাদে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ পরের দিন বুধবার টাঙ্গাইলে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করার পর তা আবার প্রত্যাহার করা হয়। নির্বাচন নিয়ে কালিহাতীর যোকারচর এলাকায় চায়ের দোকানে কথা হয় আব্দুস সামাদ নামে এক সাধারণ ভোটারের সাথে। তিনি বলেন, মনে করেছিলাম কাদের সিদ্দিকী যেহেতু নির্বাচনে আছেন তাহলে নির্বাচন দারুণ জমবে। সোহেল হাজারীরর সাথে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। কিন্তু এখন সোহেল হাজারীর সামনে তেমন কোন শক্ত প্রার্থী নেই বললেই চলে। তাই কেন্দ্রে গিয়েই কী হবে, আর ভোট দিয়েই কী হবে।
এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে হুমায়ুন কবির নামের এক ভোটার বলেন, কাদের সিদ্দিকীর শূন্যস্থান দলের অন্য কাউকে দিয়ে পূরণ হবে না। কাদের সিদ্দিকী, কাদের সিদ্দিকীই। আর এখন সোহেল হাজারীর বিপরীতে কোনো শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় নির্বাচনও হবে একতরফা।
নারান্দিয়া এলাকার বোটার বাবলু মিঞা বলেন, ভাবছিলাম ভোট দিতে যাবো। কাদের সিদ্দিকীই যেহেতু নাই তাহলে একতরফা নির্বাচনে ভোট দিয়ে কি হবে। ফলাফল কি হবে তা তো বুঝতেই পারতেছি। এদিকে উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ও পতœী নাসরিন সিদ্দিকী নির্বাচন কমিশনে আপীল করেছেন। শুক্রবার দুপুরে দলটির যুগ্ম-সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী ঢাকা নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত হয়ে তাদের পক্ষে আপীলের আবেনদনপত্র জমা দেন। রোববার সকালে শুনানী শেষে বিকালে তা খারিজ করে দেয় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান জানান, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য মোট ১০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। সেই মনোনয়নপত্রগুলো যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করা হয় চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। মনোনয়ন বাতিলের তালিকায় অন্য দুজন হলেনÑ জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সৈয়দ মোস্তাক হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আলীম। অন্য দিকে মোট ছয়জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তারা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, জাতীয় পার্টি (জেপি) সাদেক সিদ্দিকী, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির প্রার্থী ইমরুল কায়েস, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) আতাউর রহমান খান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ইকবাল হোসেন সিদ্দিকী ও হাসমত আলী।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আবদুল কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। কারণ ঋণখেলাপি সংক্রান্ত সব কিছু আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করেই মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছিল। কাদের সিদ্দিকী নির্বাচনে থাকলে ভোট চুরি করা যাবে না। এ জন্য তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই সরকার এটি করেছে।
গত ১১ই অক্টোবর ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। সব প্রার্থীর উপস্থিতিতে গত ১৩ই অক্টোবর মনোনয়ন যাচাই-বাছাই করা হয়। আগামী ২১শে অক্টোবর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রতীক বরাদ্দ হবে ২২ অক্টোবর। আর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১০ই নভেম্বর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *