সুদ মুক্ত কৃষি ঋণ দেয়ার দাবি, নওগাঁর আত্রাই-রাণীনগরে বন্যায় ভেঙ্গে রাস্তাঘাট মেরামত, ঘরবাড়ি পূর্ণবাসন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে
রুহুল আমিন, (নওগাঁ) প্রতিনিধি: উজান থেকে পাহাড়ী ঢলে বন্যায় নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার প্রায় তিন হাজার বাড়ী ভেঙ্গে গেছে। বন্যায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান নষ্ট, রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘ দেড় মাস হলেও অনেক এলাকা থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় এখনো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব মানুষদের। ক্ষতি উঠতে স্থানীয় ও ক্ষতিগ্রস্থ্যরা সরকারের কাছে দ্রুত সুদ মুক্ত কৃষি ঋণ, বীজ, রাস্তাঘাট মেরামত, ভেঙ্গে যাওয়া ঘর-বাড়ি পূণনির্মাণ বা পূণবাসনের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে চাহিদা মতবেক সরকারি বরাদ্দ না আসায় রাস্তাঘাট মেরামত, ভেঙ্গে যাওয়া ঘরবাড়ি পূর্ণবাসন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, জেলার আত্রাই উপজেলায় ২৩ আগষ্ট ভোর রাতে আত্রাই-নওগাঁ সড়কের মির্জাপুর নামক সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার ১২ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। ভেঁসে যায় ৬/৭শ’ পুকুরের মাছ। বন্যায় ১৪ হাজার আমনধানী জমি তলিয়ে যায়। এ ছাড়াও আরো দুই হাজার হেক্টর জমির ধান আংশিক নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট ঢুবে যাওয়ায় পানি বন্দি হয়ে পড়েন আড়াই লাখ লোক। দীর্ঘ দেড় মাস হলেও অনেক এলাকা থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব মানুষদের। অধিকাংশ কাঁচা-পাকা রাস্তা-ঘাট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ঘরে খাবার না থাকায় খেটে খাওয়া ভ’মিহীন এ সব মানুষরা এখন কিভাবে বাড়ীঘর নির্মাণ করবে তা নিয়েই দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
আত্রাই উপজেলার বহলা গ্রামের আজাদ হোসেন, আব্দুল গফুর, বিউটি বেগম জানান, বন্যায় ঘরবাড়ি ভেঙ্গে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ির আশেপাশে বা উঁচু জায়গায় টিনের বেড়া দিয়ে ঘর করে পরিবার নিয়ে কষ্টে বসবাস করছেন।
রাণীনগর উপজেলার আকনা গ্রামের গফুর হোসেন, সামাদ হোসেন, বাঁশবাড়িয়া গ্রামের জব্বার শেখ, সুদেব কুমার জানান, মাটির ঘর ভেঙ্গে যাওয়ায় কিভাবে এখন বাড়ি ঘর নির্মাণ করা হবে এই নিয়েই দুশ্চিন্তাই রয়েছেন। সারা বছরের আয় দিয়ে জমিতে আমন ধান চাষ করেন। জমিতে ফসলও (ধান) নেই যে এই টাকা দ্রুত তাদের ঘরে আসবে আর ঘর-বাড়িগুলো নির্মাণ করবেন।
বাঁশবাড়িয়া গ্রামের গোপাল চন্দ্র জানান, প্রতি বিঘা আমন ধান চাষ করতে অ্াড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সব ধান বন্যার পানিতে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বর্গাচাষি প্রমোদ তরফদার জানান, এক বছরের জন্যে ১০ হাজার টাকা দরে ৫ বিঘা জমি লীজ নেন। কিন্তু বন্যায় সমস্ত ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আগামিতে ইরি-বোরো ধান কিভাবে চাষ করবেন আর পরিবার নিয়ে কিভাবে চলবেন তাই নিয়েই দিশেহারা হয়ে গেছেন।
বহলা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ জানান, এসব ক্ষতিগ্রস্থ্য শতশত লোকদের ঘরবাড়ি নির্মাণে সহযোগিতার পাশাপাশি কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে বিনা সুদে ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, বন্যায় তাদের ইউনিয়নসহ পার্শ¦বর্তী ইউনিয়নগুলোর শতশত বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে। আগামি কয়েক বছরেও এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেনা।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, বন্যায় দুই উপজেলার প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির ধান সম্পন্ন নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে কৃষকরা ক্ষতিয়ে কাটিয়ে উঠতে ইত্যে মধ্যে কৃষি অধিদপ্তর থেকে আগাম ফসল সরিষা, ভুট্ট, শাক-সবজি লাগানো জন্যে ইত্যে মধ্যে পরামর্শ দেয়া শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান জানান, ইত্যে মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ্য এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়ি-ঘর ও ক্ষতিগ্রস্থ্যদের তালিকা করে উধ্বর্তন মহলের কাছে পাঠানো হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকদের জন্যে দ্রুত কৃষি সহযোগিতা দেয়ার জন্যে আন্তরিক আছে। দ্রুত কৃষকদের জন্যে ভ’ট্টা, সবজির বীজ সহ সকল সহযোগিতা অব্যহত রাখা হবে। তিনি আরো বলেন, ভেঙ্গে যাওয়া ঘর-বাড়ি পূর্ণবাসণের জন্যে সরকারি সহযোগিতা রাখার পাশাপাশি পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে রাস্তাঘাট নির্মাণে কাজ শুরু করা হবে।
নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম জানান, রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলায় বন্যায় প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও ১২শ’ ঘর-বাড়ি সম্পন্ন ও আরো দুই হাজার আংশিক ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে যাওয়ায় পাশাপাশি ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। তিনি আরো জানান, যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার তালিকা দেয়া হলেও সামান্য সরকারি বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। এই সামান্য বরাদ্দ দিয়ে রাস্তা-ঘাট মেরামত, বাড়ি-ঘর পুর্ণবাসণ, ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকদের সহযোগিতা ব্যহত হবে বলে মনে করেন।