তিন মাসের ব্যবধানে আবারও জাল দলিলে নামজারি আদমদীঘিতে জাল দলিলে জমি বিক্রি করতে এসে ধরা ; ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা সাবরেজিষ্ট্রার

আদমদীঘি প্রতিনিধিঃ
বগুড়ার আদমদীঘিতে মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে আবারও জাল দলিল ব্যবহার করে নামজারি করার পর জমি বিক্রি করতে এসে ধরা খেয়েছেন আফাজ উদ্দিন মাস্টার নামের এক প্রতারক। আফাজ উদ্দিন উপজেলার চাঁপাপুর ইউনিয়নের ভেনল্যা গ্রামের মৃত খোয়াজ উদ্দিন আকন্দের ছেলে। রেজিষ্ট্রী অফিসের দলিল লেখক শাহ আলম ওই দলিলটি লেখার কাজ সম্পন্ন করে সাবরেজিষ্ট্রার অফিসে জমা দেয়ার পর জাল ধরা পড়লে দলিল লেখক মুর্হুতের মধ্যে অফিস থেকে ছটকে পড়েন। এবার জাল দলিলসহ প্রতারককে ধরলেও প্রায় দেড় ঘন্টা ব্যাপী দেন দরবার করে মামলা না দিয়ে তাকে ছেড়ে দেয় সাবরেজিষ্ট্রার। মজার ব্যাপার হলো তিন মাসের ব্যবধানে আবারও জাল দলিলের নামজারি ও দলিল রেজিষ্ট্রি করতে এসে সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে ধরা খাওয়া ব্যাপারে উপজেলার প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা একে অপরকে দুষছেন। এদিকে গত ২৭ ফেব্রয়ারী উপজেলা সদরের কুসুম্বী মৌজায় সরকারি খাস সম্পত্তি প্রতারনা ও জাল দলিল সৃষ্টি করে সম্প্রতি ই-নামজারী করার পর ওই সম্পত্তি তিন পুত্রের নামে হস্তান্তর করতে গিয়ে আদমদীঘি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে আটক হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। গত ২৭ ফেব্রয়ারী আদমদীঘি সাব-রেজিস্ট্রার মুদাচ্ছির হাসান বাদী হয়ে দলিল দাতা আব্দুর রহমান, দলিল লেখক রুহুল আমিন (লাইঃ ১১৪) সহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে আদমদীঘি থানায় সরকারি সম্পত্তি প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতের মামলা দায়ের করেছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার চাঁপাপুর ইউনিয়নের আফাজ উদ্দিন মাস্টার গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) আড়াইল মৌজার ২৩৪৮ নং এক খানা জাল দলিল মূলে নামজারি করে। যাহার মৌজা-আড়াইল, আর.এস খতিয়ান ৯৫৫ নং এবং সহকারি কমিশনার মাহমুদা আক্তার স্বাক্ষরিত খারিজি খতিয়ান ২৫-১৩৬৬ নং খতিয়ানের ৭৭৯ দাগের ১৩ শতক সম্পত্তি বিক্রির উদ্দেশ্যে আদমদীঘি সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে আসেন। সাব রেজিষ্ট্রার তাৎক্ষনিক কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে দলিলের সার্টিফাইড কপিটি জাল সন্দেহ হলে দলিল রেজিষ্ট্রি না করে আটকে দেয়। এরপর প্রায় দেড় ঘন্টা ব্যাপী সাবরেজিষ্ট্রার অফিসে দেন দরবার শেষে মামলা না দিয়ে প্রতারককে ছেড়ে দেয় সাবরেজিষ্ট্রার। এদিকে গণমাধ্যম কর্মীরা এ ঘটনা জানার পর সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে গেলে সাবরেজিষ্ট্রার জানান আমি সাথে সাথে সহকারি কমিশনার (ভুমি) মাহমুদা সুলতানাকে অবহিত করেছি তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। অপর দিকে সহকারি কমিশনার (ভুমি) দুষছেন সাবরেজিষ্ট্রার মুদাচ্ছির হাসানকে।
আদমদীঘি রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক শাহ আলম এর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় প্রতারক আফাজ উদ্দিন মাস্টারের ফোন বন্ধ থাকায় তার সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব হয়নি। আদমদীঘি উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার মুদাচ্ছির হাসানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি কাগজপত্র যাচাই করে দেখেছি দলিলের সার্টিফাইড কপিটি জাল হওয়ায় দলিলটি রেজিষ্ট্রি না করে আটকে দেই। পূর্বের একই ধরনের ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও আজ কেন মামলা হলো না এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব ঘটনায় মামলা দিতে হবে এটা কোন কথা না। তবে আমি সাথে সাথে সহকারি কমিশনার (ভুমি) মাহমুদা সুলতানাকে অবহিত করেছি। তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এ বিষয়ে আদমদীঘি সহকারি কমিশনার (ভুমি) মাহমুদা সুলতানা বলেন, আমি ১৩৬৬ (৯-১) ২৪-২৫ সনের নামজারি আবেদনের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে সঠিক থাকায় নামজারি আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এটা আমার কোন কাজ না এটা সম্পূর্ণ সাবরেজিষ্ট্রার সাহেবের কাজ। তিনি ইচ্ছা করলে ধারাবাহিক ভুমি আইনে প্রতারণার মামলা দিতে পারতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *