চাকুরী ছেড়ে চা বানিয়ে আলমগীর স্বাবলম্বী
বিকাশ বাছাড়, মাগুরা প্রতিনিধি :
মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামে স্টাইল স্মিথ সান এ্যাপারেলস লিমিটেড গার্মেন্টস সংলগ্ন সড়কের পাশে এক ব্যতিক্রমী চায়ের দোকান দিয়ে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন আলমগীর মোল্যা নামের এক যুবক । তিনি সখ করে এই দোকানের নাম দিয়েছেন পুড়া মাটি চায়ের আড্ডা। তিনি দোকানটিকে সাজিয়েছেন বিভিন্ন গাছ ও নানা রঙের লাইটিং দিয়ে।
কর্মের শুরতে আলমগীর মোল্যা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। চাকরির সুবাদে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ভিন্ন প্রকারের চা খেয়েছেন তিনি। চা খাওয়ার প্রতি তার ছিলো অন্যরকম নেশা। সেই নেশা থেকেই মাথায় চিন্তা আসে ব্যতিত্রুমী কিছু করা যায় কিনা।সেই ইচ্ছা শক্তির জায়গা থেকেই ঢাকা থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতে এসে বাড়ির পাশে পোড়া মাটির চায়ের আড্ডা নামক একটি চায়ের দোকান দিয়েছেন। যাতে থাকছে ২০০ প্রকারের চা।
রং,গন্ধে, স্বাদে অতুলনীয় এই চা। এই ২০০ প্রকারের চা খেতে প্রতিদিন দুরদূরান্ত থেকে দোকানে আসেন চা প্রেমীরা। এই চায়ের দোকানে যে একবার চা খেয়েছে তার আর অন্য দোকানের চা খেতে মন চাইবে না বলে জানান এখান কার ভোজন রসিক চা প্রেমীরা। তারা বলেন, বাংলাদেশে এমন চায়ের দোকান বিরল।
পোড়া মাটির চায়ের আড্ডায় চা খেতে আসা সাবিত নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমি এ জায়গায় প্রতিদিনই চা খেতে আসি।এখনকার চা অন্যান্য দোকানের চায়ের থেকে ব্যতিক্রমী।এলাকায় অনেক চায়ের দোকান আছে তারপরও আমি এখান থেকে নিয়মিত চা খাই।এখানকার চা খেলে মনের মধ্যে প্রশান্তি অনুভুত হয়।
চা খেতে আসা শ্রীপুরের সাংবাদিক মুজাহিদ শেখ বলেন, এখানে ২০০ প্রকারের চা ছাড়াও কফিসহ খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে বড় কথা ২০০ প্রকারের চায়ের আয়োজন মাগুরার কোথাও আমি দেখিনি যা পোড়া মাটির চায়ের আড্ডায় পাওয়া যাচ্ছে।
কামরুল ইসলাম নামে একজন হাইস্কুলের শিক্ষক বলেন পোড়া মাটির চায়ের আড্ডায় এসে চা খেলাম।আসলে চা এবং জায়গাটাও অনেক ভালো পরবর্তীতে পরিবার সহ আসবো বলে মনে করেছি।
কাতার প্রবাসী তুহিন খন্দকার বলেন,কাতার থেকে ছুটিতে বাড়িতে এসে মাগুরার মধ্যে নামকরা আলমগীরের পোড়া মাটির চায়ের দোকানে চা খেতে প্রতিদিন আসি।বন্ধুদের সাথে আড্ডাদেই ভালো লাগে। আড্ডা শেষে বাড়িতে চলে যাই।
চা খেতে আসা তুহিন খন্দকার জানান, তিনি ঢাকা থেকে মাগুরায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।এসে জানতে পারেন আমতৈল গ্রামে পোড়া মাটির চায়ের আড্ডা নামক একটি দোকানে উন্নত মানের বিভিন্ন প্রকারের চা পাওয়া যায়, তাই তিনি চা খেতে এসেছেন। পরবর্তীতে তিনি তার পরিবার নিয়ে চা খেতে আসবেন।
আলমগীররের পোড়া মাটিতে দাম ভেদে এই ২০০ প্রকারে চায়ের মূল্য সর্বনিম্ন ৫টাকা থেকে শুরু করে সর্বচ্চ ২৫০টাকা পর্যন্ত রয়েছে।
বিভিন্ন আইটেমের চায়ের মধ্যে রয়েছে রেগুলার চা, টি ব্যাগ আইটেম, ফুলের টি, গ্রীণ টি আইটেম, কফি আইটেম, ভিন্ন কিছু চা, স্পেশাল আইটেম, লেয়ার আইটেম, সফট ড্রিংকস সহ বাহারি রঙের সব চা। এর মধ্যে রেগুলার চায়ের মধ্যে রয়েছে রং চা সহ ২৭টি আইটেম, টি ব্যাগ আইটেমে রয়েছে ১০ প্রকারের , ফুলের টিতে রয়েছে ১১ ধরনের, গ্রীন টি আইটেম রয়েছে ৪ প্রকারের, কফি রয়েছে ৮ প্রকার, ভিন্ন কিছু চা ১৩ প্রকার, স্পেশাল আইটেম রয়েছে ২০ প্রকার, লেয়ার আইটেম ৭ প্রকার, সফট ড্রিংকস ১০ প্রকারের। সব মিলিয়ে ২০০প্রকারের চা বানান তিনি। এর মধ্যে সব থেকে বেশি জনপ্রিয় চায়ের মধ্যে রয়েছে সেভেন লেয়ার চা, রাজা-বাদশা চা, তান্দুরি চা, রসগোল্লা চা,গোলাপ টি, সুলতানি চা, স্পেশাল দুধ চা সহ আরো কিছু উল্লেখ্য যোগ্য চা। যা স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়।
প্রাচীন আমলে মানুষ মনে প্রশান্তি আনার জন্য চা খেতেন। প্রাচীন সুলতানি আমলের চায়ের রং ফিরিয়ে এনেছেন মাগুরা চায়ের দোকানী আলমগীর মোল্যা। তিনি রীতি মত ২০০ প্রকারের চা বানিয়ে নিজ জেলা সহ আশপাশের জেলায় সুনাম কুড়িয়েছেন। যশোর, ঝিনাদহ,ফরিদপুর, রাজবাড়ি জেলা থেকে এখানে চায়ের স্বাদ নিতে আসেন অনেকেই।
আলমগীর মোল্যা বলেন, আগে ঢাকাতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতাম। চাকুরীর পাশাপাশি একটি টি স্টলে কাজ করি। চায়ের প্রেমে পরি সেখান থেকেই চায়ের প্রতি আমার এত আগ্রহ ভালোবাসা।
আমি এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখেছি ভালো কোন চায়ের দোকান বা চায়ের আড্ডা নেই।আমি চিন্তা করি গ্রামে একটি ভালো মানের চায়ের দোকান দেওয়ার।তারপর গ্রামে একটি উন্নত মানের পোড়া মাটির চায়ের আড্ডা নামে একটি দোকান দেই। ভালো সাড়া পেয়েছি।বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন মানুষ চা খেতে আসছেন।
আগে যেখানে চাকুরি করে মাস শেষে আমার হাতে আর কোন টাকা থাকতো না।এখন
প্রতিদিন চা বিক্রি করে লাভ হয় তা দিয়ে সংসার ও কিছু টাকা সঞ্চয়ও করতে পারি।সংসার জীবনে আমার এক ছেলে ও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
প্রতিদিনই এই পুড়া মাটির চায়ের দোকানে শতশত মানুষ ভিড় করে এক কাপ চা খাওয়ার জন্য। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ প্রতিদিন ভিড় করে এই চায়ের দোকনে। দিনের বেলা অল্প সংখ্যাক লোক হলেও বিকেল হওয়ার সাথে সাথেই ভিড় বাড়তে থাকে চা প্রেমীদের। সন্ধ্যার দিকে চায়ের আড্ডায় বিভিন্ন শ্রেনীর পেশার মানুষ কোমল পানিও চা দিয়ে তাদের পিঁপাসা মেটায়। অনেকেই আবার চা খেতে খেতে জীবনের গল্প শুরু করে। তখন যেন অন্য রকম এক আবহ র্সৃষ্টি হয়।
বিভিন্ন আইটেমের আকর্ষণীয় চা বানাতে আলমগীর মোল্যা ব্যবহার করেন,লবঙ্গ,এলাচ,দারুচিনি,পানি,দুধ আদা,চিনি,দই,মধু,বিভিন্ন ধরনের মসলা, গুড়া দুধ সহ নানান ধরনের উপকরণ দিয়ে ব্লেন্ডার করে তা সুস্বাদু চায়ে রুপান্তির করে। যা খেয়ে সকলের মনে এক ধরনের প্রশান্তি আসে মনে।এলাকায় মানুষের মুখে মুখে এখন আলমগীরের চায়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।