খুলনায় সীসা কারখানার ধোঁয়ায় পরিবেষণ দূষণ মারাত্মক হুমকিতে জনস্বাস্থ্য
সেখ রাসেল, ব্যুরো চিফ, খুলনা
পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিসিকের নিষেধ উপেক্ষা করে চলছে উৎপাদন খুলনার বিসিক শিল্পনগরীস্থ আটরা গিলেতলা ইউনিয়নে মোক্তার মেটাল নামে একটি সীসা উৎপাদন প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে চলেছে।
তারা পুরাতন ব্যাটারি থেকে প্লেট বের করে এর কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছে। কারখানার চুল্লির ধোঁয়ার সাথে বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস বের হয়ে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এতে ওই এলাকার জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতিকার চেয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় কয়েকজন ভুক্তভোগী পরিবেশ বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করেছেন। বিসিক কর্তৃপক্ষও সীসা কারখানাটি বন্ধের আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু সুফল মেলেনি। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ সীসামুক্ত পরিবেশের জন্য সচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাত গভীর হলে প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদন কাজ শুরু করে ভোর পর্যন্ত চলে এ কাজ। বন্ধ থাকা মহসিন জুট মিলের মধ্যে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটিতে নিজেস্ব পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি ভাড়ার বিনিময়ে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া ছয়টি বেনামি প্রতিষ্ঠানের সীসা উৎপাদন করা হচ্ছে। ধোঁয়ার সাথে লিড, সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড এবং সালফিউরিক এসিড বেরহয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা এসব তথ্য জানান।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ মঞ্জুরুল মুর্শিদ বলেন, সীসা উৎপাদনকালে নির্গত হওয়া বিষাক্ত গ্যাসে শিশুরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ, বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাাশি অনেকে সমস্যার সম্মূখীন হচ্ছে।। পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সচেতন করার জন্য কর্মসূচি চলছে। আগামীকাল রোববার ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ সংক্রান্ত একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র জানান, ২০২১ সালের পর থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের নবায়ন ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, গত মার্চে বিসিক শিল্পনগরী শিরোমনী এলাকার প্লট বি-৬৬, বি-৬৭ ও বি ৬৮ এর মধ্যে অবৈধ ব্যবসা ও সীসা গলানোর কার্যক্রম বন্ধের জন্য কর্তৃপক্ষ আদেশ দিয়েছেন।
বিসিক-এর খুলনা জেলা উপ মহা ব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম সাকলাইন দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, আদেশ উপক্ষো করে সীসা উৎপাদনের বিষয়টি প্লট বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে। এরপর মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সীসার কাঁচামাল হচ্ছে এক ধরণের আকরিক, যা খনি থেকে সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু খুলনায় আকরিকের বিকল্প হিসেবে পুরনো ব্যাটারির অংশ বিশেষ ব্যবহার হচ্ছে। শহরের শেখপাড়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত রিক্সা, আইপিএসসহ বিভিন্ন গাড়ীর ব্যাটারি সংগ্রহ করে কারখানায় জড়ো করা হয়। সেগুলো ভেঙ্গে শ্রমিকরা কালো রঙের প্লেট বের করে। ওই প্লেট ম্যানুয়াল চুল্লির কড়াইয়ের ওপর রেখে গলানো হয়। তখন তা লাল রং ধারণ করে। এরপর পানি দিয়ে ঠাণ্ডা করে সীসার বার বানানো হয়। যা বিভিন্ন আসল ও নকল ব্যাটারি প্রস্তুতকারী কোম্পানিতে বিক্রি করাহয়। পাচার করা হয় পাশর্^বর্তী দেশেও। অবৈধ কারখানাটিতে ৭ থেকে ৯ জন শ্রমিক কাজ করেন। তারা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুকিতে আছেন। মোক্তার মেটালের পশ্চিমে ৫শ’ মিটারের মধ্যে আবাসিক এলাকা। পূবে মহসীন জুট মিলের কয়েকটি প্লট। উত্তরে কৃষি জমি, এরপর গোলামনগর এলাকা। দক্ষিনে শিল্প এলাকা। সাত থেকে সাড়ে ৭শ’ মিটারের মধ্যে কেডিএর আবাসিক এলাকা। স্থানীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানান, সোনাডাঙ্গা বাইপাস হয়ে আড়ংঘাটা বাইপাস দিয়ে আড়ংঘাটা বাজার হয়ে ভেতরের গোপন রাস্তা দিয়ে ফুলবাড়ীগেট জব্দীপুর হয়ে যোগীপোলের ভেতরের রাস্তা দিয়ে মোক্তার মেটালের কাঁচামাল প্রবেশ করে। খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ সাদিকুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর-পরই সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করা হয়। কারখানাটি বন্ধ করে দেবার জন্য নোটিশ দিয়েও কাজ হয়নি। কারখানা মালিক কর্তৃক পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অধিদপ্তরের ইনফোর্সমেন্ট শাখায় লিখিত অনুরোধ জানানো হবে।