মোংলায় নদীভাঙনে ঝুঁকিপূর্ণ ঘাটে চলছে পারাপার বিপদে হাজারো গার্মেন্টস শ্রমিক,ভাঙন রোধে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অগ্রগতি থমকে

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট:বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলের বাগেরহাটের মোংলার মামার ঘাট এলাকায় নদীভাঙনের পরিস্থিতি দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে।ঘাটটি ভেঙে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক।

বিকল্প হিসেবে একটি অস্থায়ী কাঠের ঘাট তৈরি করা হলেও, সেটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিনিয়তই সেখানে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। কাঠের ঘাটটি সংকীর্ণ এবং দুর্বল হওয়ায় নদী পারাপার অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিদিন মোংলার এপার থেকে হাজার হাজার শ্রমিক নদী পেরিয়ে কর্মস্থলে যান। ঘাটের এই করুণ অবস্থায় তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভাঙন রোধে প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হলেও তা বর্তমানে সরকারি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে পড়েছে।সম্প্রতি মামার ঘাট ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল বিরুনির সঙ্গে যোগাযোগ করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি জিও ব্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধের অনুরোধ জানান।

প্রকৌশলী বিরুনী জানান, “ভাঙনের ৫০ মিটারের মধ্যে যদি কোনো লেক বা গভীর খাল থাকে, তাহলে জিও ব্যাগ প্রয়োগে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। মামার ঘাটের পাশে যে লেকটি রয়েছে, সেটি আগে ভরাট না করলে কোনো পদক্ষেপই টেকসই হবে না।” তিনি আরও জানান, “ছয় মাস আগে দুইবার জিও ব্যাগ ব্যবহার করেও ফল পাওয়া যায়নি।”

এই বিষয়টি ইতোমধ্যেই মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পৌরসভাকে জানানো হলেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বিষয়টি জানতে পেরে আশ্বাস দিয়েছেন, পাউবো’র প্রকৌশলী তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি নিজেই প্রকৌশলী দল পাঠিয়ে এলাকা পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। তবে, এ উদ্যোগও আটকে আছে একটি চিঠির অভাবে।

নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, “আমি নিজ থেকে বন্দরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে পারব না। প্রথমে মোংলা পৌরসভা থেকে আমাদের কাছে একটি চিঠি পাঠাতে হবে।”

জানা গেছে, মোংলা পৌরসভা বর্তমানে সেই চিঠি প্রস্তুতের কাজ করছে। চিঠি প্রাপ্তির পর ঢাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কার্যকর পদক্ষেপের চেষ্টা করবেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, “সরকারি দপ্তরের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যেভাবে কাজকে ধীর করে দেয়, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। চিঠি জমা হলে আমি নিজে ঢাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করব, যাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়।”

স্থানীয়দের মতে, এখনই যদি ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয়, তাহলে খুব শিগগিরই মামার ঘাট ও আশপাশের জনপদের বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *