সুন্দরগঞ্জে কর্মসৃজন প্রকল্পের কোটি টাকা লোপাট॥ ফাইল গোপন করায় এক কর্মচারিকে অনিদিষ্ট কালের ছুটি॥ দুই কর্মকর্তা এখনও বহাল তবিয়তে
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি : সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসৃজন কর্মসূিচ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে কোটি টাকার অধিক আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে (৪০ দিনের) আওতায় উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে ৪ হাজার ৪৭৪ জন উপকারভোগীর বরাদ্দ মেলে। এর বিপরীতে প্রতি শ্রমিকের দৈনিক ২০০ টাকা মজুরি হিসেবে ৪০ দিনের জন্য ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (বর্তমানে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় কর্মরত) জহিরুল ইসলাম ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত ইউএনও (বর্তমানে ঠাঁকুরগাঁও জেলায় সহকারি কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত) রাশেদুল হক প্রধান যোগসাজস করে মাসিক সমন্বয় সভায় ৩ ইউনিয়নে ৪৭৬ উপকারভোগীর নাম গোপন রেখে অবশিষ্ট নাম ১৫ ইউনিয়নে বিভাজন করে দেয়। গোপনকৃত শ্রমিকদের নামের মধ্যে বেলকায় ১৬৭, দহবন্দে ১১৮ এবং হরিপুর ইউনিয়নে ১৯১ জন উপকারভোগীর নাম কর্মকর্তাদ্বয় ওই সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সাথে গোপন আতাত করে তাদের বিপরীতে শ্রমিক প্রতি প্রতিদিন ২০০ টাকা হারে ৪০ দিনের মজুরি ৩৮ লাখ ৮ হাজার টাকা আত্মসাত করে। এছাড়া ১৫ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের আনুসঙ্গীক ২ হাজার ৫০০ টাকা হিসেবে ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা, সদস্যদের আনুসঙ্গীক ২ হাজার টাকা হিসেবে ১৩৫ জনের ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং শ্রমিকদের সার্ভিস ভাতা ২ হাজার টাকা হারে ১৩৫ জনের ২ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ মোট ৪৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের সহকারি দেলোয়ার হোসেনের নামে ইস্যুকৃত ৪টি চেকের মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংক সুন্দরগঞ্জ শাখার মাদার একাউন্ট থেকে উত্তোলন করে সর্বমোট ১ কোটি ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাত করেন। এব্যাপারে বর্তমান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নূরুন্নবী সরকার অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানান, অভিযোগটি তার আগের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সাবেক ইউএনও’র বিরুদ্ধে। অভিযোগের তদন্ত চলছে। অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক পিআইও জহিরুল ইসলাম ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত ইউএনও রাশেদুল হক প্রধান বদলি জনিত কারণে অন্যত্র চলে গেলে দুর্নীতির সংশ্লিষ্ট ফাইলপত্র পিআইও’র অফিস সহকারি দেলোয়ার হোসেন লুকিয়ে রাখেন। যার কারণে বর্তমান পিআইও নুরুন্নবী সরকার ফাইলপত্র চেয়ে দেলোয়ার হোসেনকে চিঠি প্রদান করেন এবং বিভিন্ন দপ্তরে অবগত করেন। ইউপি সদস্যদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৭ মে জেলা পর্যায় থেকে একটি তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া ফাইলপত্র গোপন ও টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) গত ১৪ জুন সরেজমিন তদন্ত পূর্বক অফিস সহকারি দেলোয়ার হোসেনকে অনির্দিষ্টকালের ছুটি ঘোষনা করেন। কিন্তু দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। সাবেক ভারপ্রাপ্ত ইউএনও রাশেদুল হক প্রধান মোবাইল ফোনে জানান, দায়িত্ব পালনের সময় অনেক ফাইল ও চেক সহি করতে হয়েছে। সহি করার সময় সকল ফাইল ও চেক সঠিকভাবে দেখা সম্ভব হয় না। তবে ফাইল ও চেকের দায়িত্ব স্ব-স্ব কর্তৃপক্ষের, কারন আমি প্রতিস্বাক্ষর করি। এই প্রতিস্বাক্ষরে ভুল হতেও পারে। সাবেক পিআইও জহিরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, অভিযোগ হয়েছে, তদন্ত চলছে। দোষি প্রমাণিত হলে যে শাস্তি হবে তা মাথা পেতে নিব। এ বিষয়ে বর্তমান ইউএনও আবদুল হাই মিলটন জানান, অভিযোগের তদন্ত চলছে। অপরাধী প্রমাণ হলে শাস্তি পেতেই হবে।