নারী দিয়ে বিএনপি নেতার আপত্তিকর ভিডিও ধারণ, এসআই জব্বার জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
শনিবার (৫ এপ্রিল) রাতে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রিপনুজ্জামান রিপন (৩২), কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়ন জিয়া পরিষদের সভাপতি। বাদী হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় চারজন নাম উল্লেখ করে এবং ২-৩ জন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি, চাঁদাবাজি, দস্যুতা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে মামলা করেছেন।

রাস্তাঘাটে বা দোকানে দেখা-সাক্ষাতে পরিচয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মোবাইল ফোনে বিভিন্ন অজুহাতে বাসায় ডাকে নিয়ে যাওয়া। একপর্যায়ে ‘কল গার্ল’ দিয়ে জোর করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি সাতক্ষীরায় এমন ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। তবে জানা যায়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই এমন অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে সাতক্ষীরা সদর থানার এএসআই আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবর পৃথক আরো ১টি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- কালিগঞ্জ থানার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মুকুন্দ মধুসূদনপুর গ্রামের মিজানুর রহমানের কন্যা শারমিন আক্তার রিমা, তার কথিত স্বামী একই গ্রামের এলাহি বক্স গাজীর ছেলে আব্দুল কাদের (৩৫), দেবহাটার পুষ্পকাটি গ্রামের আব্দুর রউফের ছেলে বাবলুর রহমান (৫০) ও সাতক্ষীরা শহরের কথিত সাংবাদিক ফজর আলী (৫০)। ভুক্তভোগী কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়ন জিয়া পরিষদের সভাপতি রিপনুজ্জামান রিপন জানান, কালিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নাজিমগঞ্জ বাজারে তার মালিকানাধীন চায়না-বাংলা কসমেটিক্স নামে একটি দোকান আছে। সেই সুবাদে গত ৬ মাস আগে দোকানে বেচাকেনার সময় শারমিন আক্তার রিমার সঙ্গে পরিচয় ঘটে। সেই সূত্রে গত ১৭ মার্চ বিকেলে রিপনুজ্জামানের দোকান থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকার মালামাল বাকিতে নেয়। গত ১ এপ্রিল রিপন সাতক্ষীরা শহরে গেলে বাকি টাকা দেওয়ার জন্য বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ টাকা নেওয়ার জন্য কাটিয়া এলাকায় রিমার ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে যান কাদের।

তিনি জানান, আমাকে ঘরে বসতে দিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পাশের ঘর থাকা ৫-৬ জনের একটি দল এসে তাকে এলোপাতাড়ি পেটাতে শুরু করে। একপর্যায়ে পুরো কাপড় খুলে কলগার্ল দিয়ে আপত্তিকর অবস্থায় ভিডিও ধারণ করে। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ওই সময় তাদের পিটুনি সহ্য করতে না পেরে বাড়িতে ফোন করে স্বজনদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ২১ হাজার টাকা এবং তার কাছে রক্ষিত ৫০ হাজার টাকা তারা ছিনিয়ে নেয়। রিপন বলেন, পরবর্তীতে সদর থানার এএসআই জব্বার গিয়ে টাকার ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। এরপরেও ৫ লাখ টাকা আদায়ের জন্য আমাকে ৩টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করায় এবং কোরআন শরিফ ছুঁয়ে শপথ করিয়ে কাউকে না বলার অঙ্গীকার করিয়ে ১০টার সময় ছেড়ে দেয়।

এদিকে, রিপনুজ্জামান রিপন বাইরে গিয়ে তার এক স্বজনের মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানান। পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা করার জন্য নির্দেশ দেন। আপরদিকে, চক্রটি বিরুদ্ধে এর আগে ২৩ সালের ২৬ এপ্রিল হাফিজুর রহমান নামে এক সাংবাদিককে জোর করে ধরে নিয়ে একটি হোটেলে মারধর ও জামাকাপড় ছিঁড়ে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি শামিমুল হক বলেন, ইতোমধ্যে ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। তালাবদ্ধ বাড়িছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত হাসান খাঁন বলেন, আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নেওয়ার ঘটনায় ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে মর্মে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলতে পারব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *