কালীগঞ্জে প্রধান শিক্ষক বাবলু ও সাবেক সভাপতি কাজলের বিরুদ্ধে অভিযোগ

কালিগঞ্জ প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার উজ্জীবনী ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলু ও তার ফুফাতো ভাই সাবেক সভাপতি ফিরোজ কবির কাজলের বিরুদ্ধে মন্ত্রী পরিষদ সচিব ড. আব্দুর রশিদের নিকট লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

মন্ত্রী পরিষদ সচিব ড. আব্দুর রশিদ গত শনিবার সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলায় আসলে সেখানে তার নিকট শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা লিখিতভাবে অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী। লিখিত অভিযোগে জানা যায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে গত ১৯/৩ /১৮ ইং তারিখে প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলুর আপন ফুফাতো ভাই , ফিরোজ কবির কাজল সভাপতি দায়িত্ব নেয়।

সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ৫ টি পদে নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে।

নিরাপত্তা প্রহরী পদে ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলামের নিকট থেকে ৭ লক্ষ, পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ফরিদ উদ্দিনের নিকট থেকে ৯ লাখ, অফিস সহায়ক পদে আজীবুর রহমানের নিকট থেকে ৯ লাখ, সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে মাহমুদ নবীর নিকট থেকে ৬ লক্ষ টাকা এবং নৈশপ্রহরী পদে ইয়াসিন আলী নিকট থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করে। বিষয়টি তারা লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন।

এছাড়া বিদ্যালয়ের রেজুলেশন খাতা সহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র তার নিকট রেখে বিদ্যালয়ের ফান্ডের লক্ষ লক্ষ টাকা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন । এছাড়াও তিনি বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে মাসে ২/১ দিনের জন্য বিদ্যালয়ে আসলেও ১ ঘন্টার বেশি সময় অবস্থান করতেন না । প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়টি নির্বাচনী ও দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার সহ গোপন কক্ষ বানিয়ে ছাত্রীদের কু-প্রস্তাবসহ নানা ধরনের যৌন- হয়রানি ও নির্যাতন চালিয়ে আসছিল।

এছাড়াও অভিযোগে আরো উল্লেখ করেছেন নিজের স্ত্রী ২ সন্তানকে রেখে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর শ্যামনগর থানার হায়বাতপুর গ্রামে একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় কক্ষ ভাড়া নিয়ে অন্যের স্ত্রীকে রক্ষিতা হিসেবে রেখে অসামাজিক কার্যকলাপরত অবস্থায় শ্যামনগর থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে । বিষয়টি নিয়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে শ্যামনগর থানা পুলিশকে ওই সময় মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে সে যাত্রায় রেহাই পায় । তবে অসামাজিক কার্যকলাপের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে ।

অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার পূর্বে কালীগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করা কালীন এক ছাত্রীর সঙ্গে অবৈধ মেলামেশায় গর্ভপাত ঘটনার অপরাধে ওই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে । পরে বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সেই শাস্তি মওকুফে রেহাই পায় । অত্র বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে নিজেকে বিগত আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন শিক্ষকদের নামে নাশকতা মামলা দিয়ে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে এলাকায় ছাড়া করে তাদের পরিবারের লোকদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে মিলিত হওয়ার ঘটনা অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে বিদ্যালয় ভবনে ফেলে ওই সব শিক্ষকদের শায়েস্তা করা হতো বলে অভিযোগে রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ৫ ই আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে কিছুদিন প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলু গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে থাকে । সেই সুযোগে গত ৩০/১০/২০২৪ ইংতারিখে নবম শ্রেণীর দু,জন ছাত্রীর জন্মদিন পালনের ফাঁদে ফেলে নিজের খরচে কেক কিনে এনে তার গোপন শয়ন কক্ষে নিয়ে যৌন হয়রানি ,হেনেস্তার ঘটনা ঘটায় । উক্ত ঘটনা কে কেন্দ্র করে গত ১৮ নভেম্বর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবকরা লম্পট প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলুর অপসারণের দাবিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ করে তাকে বিদ্যালয় ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখে ।

পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে সহকারি কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস ঘটনাস্থলে যেয়ে ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলু অভিযোগ অস্বীকার করে জানান রাজনৈতিক কারণে প্রতিপক্ষরা তাকে হেনস্থা করছেন। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কল্পিত অভিযোগ তুলে সামাজিকভাবে হেও প্রতিপন্ন করছেন বলে তিনি দাবি করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *