কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর হাতে আটক যুবদল নেতার মৃত্যু
কুমিল্লা বিশেষ প্রতিনিধি:
কুমিল্লায় গভীর রাতে বাড়ি থেকে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক মো. তৌহিদুল ইসলাম (৪০) নামে এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক। পরিবারের অভিযোগ, নির্যাতনের কারণে তিনি মারা গেছেন। নিহত তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবি ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক। একই ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তৌহিদুল চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন। গত রবিবার তার বাবার মৃত্যুর খবরে তিনি বাড়ি আসেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
স্বজনরা জানান, একই এলাকার ফজলু মিয়ার ছেলে তানজিম আহমেদের সঙ্গে তৌহিদের জমি নিয়ে ঝামেলা ছিল। তাদের অভিযোগ, তানজিমরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে যৌথ বাহিনীকে তৌহিদের বিরুদ্ধে প্রভাবিত করছে। যখন যৌথ বাহিনী তৌহিদকে আটক করে নিয়ে আসে, তখন সঙ্গে ছিল আরেক স্থানীয় রহমত আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম। তারাই যৌথ বাহিনীকে দিয়ে তৌহিদকে হত্যা করেছে বলে গণমাধ্যমকে জানান।
নিহতের আপন চাচাতো ভাই রবিউল ইসলাম বলেন, তৌহিদের বাবা ও আমার চাচা মোখলেছুর রহমান চার দিন আগে মারা যান। গতকাল শুক্রবার ছিল তার কুলখানি। তাই বৃহস্পতিবার রাতে আমরা বাড়িতে গরু জবাই করি। রাত ২টার দিকে যৌথ বাহিনী বাড়ি থেকে তৌহিদকে তুলে নিয়ে যায়। শুক্রবার বেলা পৌনে বারোটার দিকে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মোরশেদ ফোনে জানান, তৌহিদের অবস্থা খুব খারাপ। আমরা যেন দ্রুত কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে আসি। হাসপাতালে আসার পর দেখি তৌহিদ আর নেই। চার দিন আগে মারা গেছে তার বাবা। আর চার দিন পর যৌথ বাহিনী তৌহিদকে মেরে ফেলল। তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা, এমনকি কোনো অভিযোগও নেই।
তৌহিদকে হাসপাতালে নিয়ে আসা এসআই মোরশেদ বলেন, ‘সাড়ে ১১টার দিকে থানার ডিউটি অফিসার আমাকে জানান, যৌথ বাহিনী ফোন করে বলেছে, ঝাঁকুনিপাড়া গোমতী বিলাসে দ্রুত যাওয়ার জন্য। ওসি স্যারকে বলে আমি গাড়ি নিয়ে যাই। তখন যৌথ বাহিনী আমাকে তৌহিদকে নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু তৌহিদের অবস্থা বেগতিক দেখে আমি তাদেরকে বলি আমি একা নেব না। আপনারাও আসেন। কিন্তু তারা আসতে রাজি হয়নি। পরে আমি তৌহিদকে যখন গাড়িতে উঠাই তখনও তার জীবন ছিল। কিন্তু কুমেক হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।’
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনার পর এ বিষয়ে যৌথ বাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য জানানো হয়নি।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আমার দ্বারা কোনো কিছু বলা সম্ভব না।’এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কুমিল্লা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপি, আমড়াতলী ইউনিয়ন ও পাঁচথুবি ইউনিয়ন বিএনপি এক যৌথ বিবৃতিতে অবিলম্বে যুবদল নেতা তৌহিদ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে।