পবিত্র লাইলাতুল বারাত

soba baratআজ ১৫ শাবান। পবিত্র লাইলাতুল বারাত বা শবেবরাত। শাবান মাস বরকতময় একটি মাস। এ মাসকে রমজানের মুয়াজ্জিন হিসেবে অভিহিত করা হয়। সালাত আদায়ের জন্য মুয়াজ্জিন যেমন ডাক দেন তেমনি মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার জন্য মুমিনদের প্রস্তুত হওয়ার তাগিদ দেয় এই মাস। মধ্য শাবানের এক মহিমান্বিত রাত সম্পর্কে হাদিস শরিফে বেশ কিছু বর্ণনা এসেছে। হজরত উসমান ইবনে আবিল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘যখন মধ্য শাবানের রাত আগমন করে তখন একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো যাচনাকারী আছে কি আমি তাকে দান করব। ব্যভিচারিণী ও শিরকে জড়িত ব্যতীত যত লোক যা কিছু চাইবে সবাইকে তাদের প্রার্থনা পূরণ করে দেওয়া হবে। (বায়হাকি),মধ্য শাবানের ওই মহিমান্বিত রাতের বর্ণনা রয়েছে আরও কয়েকটি হাদিসে। হজরত আয়শা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি রসুলুল্লাহকে খুঁজে পেলাম না। তখন বের হয়ে দেখি তিনি বাক্বীতে (আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে) রয়েছেন। তিনি বললেন, তুমি কি আশঙ্কা করছিলে যে, আল্লাহ ও তাঁর রসুল তোমার ওপর অবিচার করবেন! আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল, আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি আপনার অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে গমন করেছেন। তখন তিনি বললেন, মহিমান্বিত পরাক্রান্ত আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং ‘কালব’ গোত্রের মেষপালের পশমের অধিক সংখ্যককে ক্ষমা করেন। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ),১৫ শাবান অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখের দিবাগত ইবাদত বন্দেগি করে কাটানো উত্তম। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত জেগে থাকবে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যাবে। ১. জিলহজের অষ্টম রাত। ২. জিলহজের নবম রাত। ৩. ঈদুল আজহার রাত। ৪. ঈদুল ফিতরের রাত। ৫. শাবানের ১৫ তারিখের রাত। (আত্তারগিব ওয়াত্তারহিব)রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস শাবানের ১৫ তারিখের রাতে নফল এবাদতের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। হজরত আলী (রা.) বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, শাবানের রাত যখন উপস্থিত হয় তখন তোমরা রাত জেগে এবাদত কর এবং দিনে রোজা রাখ। কেননা আল্লাহপাক এই রাতে সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে অবতরণ করে বলেন কোনো ক্ষমাপ্রার্থী কি নেই আমি তাকে ক্ষমা করে দেব, কোনো জীবিকা প্রার্থী কি নেই আমি তাকে জীবিকা দান করব। কোনো বিপদগ্রস্ত কি নেই আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দেব। এভাবে ভোররাত পর্যন্ত ঘোষণা চলতে থাকে (ইবনে মাজা)।শবেবরাতের তাৎপর্য প্রসঙ্গে একটি হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) হজরত রসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) এরশাদ করেন, হে আয়েশা! এ রাতে কী হয় জানো হজরত আয়েশা পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ এ রাতে কী হয় রসুল (সা.) বললেন, এ রাতে আগামী বছর যত শিশু জন্ম নেবে এবং যত লোক মারা যাবে তাদের তালিকা করা হয়। মানুষের বিগত বছরের সব আমল মহান আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং এ রাতে মানুষের রিজিক অবতীর্ণ হয় (মিশকাত)।লাইলাতুল বরাত বা শবেবরাতে রাত জেগে নফল এবাদত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত। শবেবরাত উপলক্ষে করণীয় দুটি। প্রথমত, রাত জেগে এবাদত করা, যেমন নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ তাহলিল, দোয়া, দুরুদ, তাওবা ইস্তেগফার ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত, পরদিন রোজা রাখা। এমনিতে শাবান মাসজুড়েই অধিকহারে নফল রোজা রাখা উত্তম। হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রায় সারা শাবান মাসেই নফল রোজা রাখতেন। তিনি এই পবিত্র রাতে বেশি এবাদত ও দোয়া করতেন, কবর জিয়ারত করতেন। আমাদের দেশে কেউ কেউ এই পবিত্র রাতে আতশবাজি ফোটানো কিংবা বাড়িতে বা কবরে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করেন। এ ধরনের গর্হিত কর্মকাণ্ড থেকে সবারই বিরত থাকা উচিত। এমন কিছু করা উচিত নয় যা বিদআত। আল্লাহ আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকার তাওফিক দান করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *