বাজার সয়লাব বিপজ্জনক চোরাই ওষুধে

d96249c356e46da2d2c244407a95f758-300ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কদিন পরপরই জীবন রক্ষাকারী বিদেশি ওষুধের চোরাচালান ধরা পড়ে। সঙ্গে আটক করা হয় চোরাচালানে জড়িতদেরও। কিন্তু বার বার ধরা পড়লেও বন্ধ হচ্ছে না ওষুধের এ চোরাচালান। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বিমানবন্দরে যেসব ওষুধ আটক হয় তার চেয়ে অনেক বেশি অনায়াসে বাইরে চলে আসতে পারে। সে জন্যই দু-একটি চালান আটকের পরও থেমে যায় না এ তৎপরতা। বিমানবন্দরের সব পক্ষকে ম্যানেজ করেই শত শত কোটি টাকার বিপজ্জনক ওষুধ আসে চোরাপথে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থলপথেও আসছে চোরাই ওষুধ। চোরাচালানের ক্ষেত্রে ভুয়া কোম্পানি, ভুয়া ঠিকানা ও জাল ডকুমেন্ট ব্যবহার করা হয়; যাতে বাহক ধরা পড়লেও প্রকৃত হোতা আড়ালে থেকে যান। স্থলপথ ও আকাশপথে মূলত ভারত, মিয়ানমার, দুবাই, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ড থেকে নিষিদ্ধ ওষুধ দেশে আসছে। প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর মিটফোর্ড, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার ওষুধ বাজারে। এদিকে ওষুধ চোরাচালান ঠেকাতে সরকার নিষ্ক্রিয় কেন- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। ১৮ মে ওষুধ চোরাচালান, ব্যবহৃত সুচ-সিরিঞ্জ ও অপারেশনে ব্যবহৃত সরঞ্জাম পুনর্ব্যবহার বন্ধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বে আইনি ঘোষণা করা হবে না- তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক ও পরিচালককে জবাবদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের আদালত এ রুল জারি করেন। ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো প্রকার ওষুধ আমদানি, মজুদ ও বিক্রি সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু তাদের অনুমতির বিষয়টি উপেক্ষা করেই সংঘবদ্ধ চক্র নিয়ে আসে আমদানিনিষিদ্ধ কিংবা দুষ্প্রাপ্য দামি ওষুধ। জনবল সংকটের অজুহাতে এ ব্যাপারে ওষুধ প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না বলে সূত্র জানায়। ওষুধ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বৈধ অনুমতি নিয়ে যেসব বিদেশি ওষুধ আমদানি হয় তার চেয়ে বেশি ওষুধ আসে চোরাচালান হয়ে। চোরাপথে আসা ওষুধের মধ্যে আমদানিনিষিদ্ধ অনেক ওষুধ থাকে। ওষুধ বাজারে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেসব ওষুধ গোপনে বিক্রি হয় সারা দেশে। বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন পথে চোরাই হয়ে আসা ওষুধের মান ও কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে ওষুধ বিশেষজ্ঞদের। তার পরও এসব ওষুধ আসছে বাজারের চাহিদার কারণে। বিমানবন্দরে আটক ওষুধের মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছে দুষ্প্রাপ্য ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও যৌন উত্তেজক উচ্চ মূল্যের ওষুধ। জানা গেছে, গত এক মাসে শুধু শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে আসা প্রায় ৩৫ কোটি টাকার অবৈধ ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী আটক করেছেন কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা কর্মীরা। চোরাই ওষুধ আমদানির কাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ফরেন পোস্ট অফিস ও কুরিয়ার সার্ভিস। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আসা একাধিক চোরাচালান সম্প্রতি আটক হয়েছে। ব্রিস্টল ফার্মার সংশোধনী : ৩১ মে প্রকাশিত ‘ওষুধশিল্পে নৈরাজ্য’ সিরিজ রিপোর্ট প্রসঙ্গে ব্রিস্টল ফার্মা জানিয়েছে, তাদের ওষুধ কেটোরোল্যাকের মূল্য প্রতি পাতা ৪ টাকা নয়, ১০ টাকা। কোম্পানিটি গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *