বাঁশশিল্পের ওপর সংসার চলে ঋষি সম্প্রদায়ের ১৯ পরিবারের লোহাগড়ার ঋষি সম্প্রদায়ের ১৯ পরিবারের বাঁশ কিনতে এখন ঋণ নিতে হবে না
কাজী আশরাফ,লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : মনিকা রানীর (৩৫) স্বামী অখিল বিশ্বাস সড়ক দুর্ঘটনায় অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন গত তিন বছর। তিন মেয়ে ও এক ছেলে তাঁদের। ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মেয়ে প্রতিবন্ধী। অন্য মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। বাঁশশিল্পের ওপর চলে তাঁদের চার সদস্যের সংসার। কিন্তু বাঁশ কিনতে ধার-দেনা করতে হয়। নিতে হয় ঋণ। মনিকার এখনো ১০ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে একটি এনজিওতে (আশাতে)।
মনিকা রানীর এখন আর ধার-দেনা করে বা ঋণ নিয়ে বাঁশ কিনতে হবে না। বাঁশের সঙ্গে বাঁশশিল্প সামগ্রী তৈরির অন্য উপকরণও পাবেন বিনামূল্যে। মনিকার মতো নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা সদরের গোপিনাথপুর এবং লোহাগড়া কলেজপাড়ার ঋষি সম্প্রদায়ের ১৯ পরিবারের পাশে দাড়িয়েছে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ নামের এনজিও। এ এনজিওটি এখন থেকে বাঁশশিল্পের ওপর নির্ভরশীল ১৯টি পরিবারকে প্রয়োজনীয় উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করবে। এ ছাড়া বাঁশশিল্প সামগ্রী তৈরির উন্নত পদ্ধতি বিষয়ক নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং এগুলো বিপননে সহায়তা করবে এনজিওটি।
ঋষিপাড়ায় ঘুরে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদের অধিকাংশ পরিবার হতদরিদ্র। অনেক পরিবারের পুরুষ মানুষটি কর্মঅক্ষম। তাঁরা বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি, ঝাঁকা, চালোন, কুলা, ডোল ইত্যাদি তৈরি করেন। তা বিক্রি করে চলে তাঁদের সংসার। এগুলো তৈরির উপকরণ কিনতে গিয়ে অধিকাংশ পরিববারের রয়েছে ঋণ। সাধারণত নারীরাই এ পেশায় মুখ্য ভুমিকা রাখেন।
মনিকা বলেন, ‘এগুলো তৈরির উপকরণ বিনামূল্যে পেলে আর ঋণ থাকবে না।’ গোপিনাথপুরের স্মৃতি বিশ্বাসের (২০) স্বামী কৃষ্ণ বিশ্বাস অসুস্থ হওয়ায় কোনো কাজ-কর্ম করতে পারেন না। ছোট ছোট তিন মেয়ে নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার। স্মৃতি বিশ্বাসের আয়ের ওপর নির্ভরশীল তাঁদের সংসার। বাঁশশিল্প সামগ্রী তৈরি করে চলে তাঁর সংসার। স্মৃতি বিশ্বাস বলেন, ‘খুবই আনন্দ লাগছে, এখন থেকে আর ঋণ থাকবে না।’
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ যশোর এলাকার প্রকল্প কর্মকর্তা আবেদা সুলতানা জানান, এসব পরিবারে মানবপাচারের ঝুঁকি রয়েছে। সেদিক লক্ষ্য রেখে তাঁদের আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ এনজিওর যশোর অঞ্চলের সমন্বয়কারী মাইকেল মন্ডল বলেন, ‘তাঁদের উৎপাদন, বিপনন এবং মনোবল উন্নত করতে সার্বক্ষণিক পাশে থাকবে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।’