মাওয়া থেকে ফিরে: ট্রাক চালক সাইদুল হক(৪৫)। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পানি ও ভোজ্যতেল বোঝাই ট্রাক নিয়ে মাওয়া ঘাটে পৌঁছেন। তারপর ফেরির জন্য অপেক্ষা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাটে পৌঁছাতে হবে মালামাল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যার আগে ট্রাক ফেরিতে উঠতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন চালক সাইদুল। তার অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না। কখনও ফেরি পারাপারে অপেক্ষারত ট্রাকের ছায়ায় স্যান্ডেল পেতে বসে বিড়ি ফুঁকছেন, কখনও আবার সঙ্গীর সঙ্গে গল্প। তবুও যেন শেষ হয় না অপেক্ষার প্রহর। তারওপর চাঁদাবাজির হ্যাপা। প্রতিটি ট্রাকের ফেরি ভাড়া ১ হাজার ৪০০ টাকা। কিন্তু অতিরিক্ত ১৫০ টাকা চাঁদা দেয়া লাগে ট্রাক চালকদের। এছাড়া পুলিশদের ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে যদি ফেরিতে কোনো যানবাহন পারাপার করতে হয় তবে বিশেষ সার্ভিস এর নামে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা গুণতে হয় চালকদের। সাইদুল বলেন, পদ্মাসেতু হইলে চাঁদাবাজ ও পুলিশরা ভাতে মইরবে। মাওয়া ঘাটে দুর্নীতি থাকবে না। সেতু হলি(হলে) বইসি থাকতে হবে না। চোখের পলকে মাওয়া থেকে জাজিরা যাবো। সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় প্রভাশালীরা প্রতিটি বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাসে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে অতিরিক্ত চাঁদা তুলছে। যে সব চালক অতিরিক্ত টাকা দিতে পারছেন তারা দ্রুততম সময়ে ফেরিতে পার হতে পারছেন। আর যেসব ট্রাক চালক অতিরিক্ত টাকা দিতে পারছেন না তাদের মাওয়া ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরির জন্য। পদ্মাসেতুর কাজ কবে শেষ হয় সেদিকেই তাই এখন সবার দৃষ্টি। এর মধেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ১৮ শতাংশ। শুক্রবার সরেজমিনে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় দেখা গেছে, প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ২০২০ সালে সেতুর কাজ শেষ হবে। কিন্তু কবে পদ্মাসেতুর ওপর যানবাহন চলাচল শুরু হবে তা নিয়ে তাই অধীর অপেক্ষায় পদ্মাপাড়ের মানুষ। এমনই একজন মুন্সীগঞ্জের হলুদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফজলু শেখ। বর্তমানে মাওঘা ঘাটে ক্ষুদ্র দোকান তার। স্বপ্নের পদ্মাসেতু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পদ্মাসেতু দেইখ্যা মরতে পারুম তো, ২০২০ সাল পর্যন্ত বাঁচমু তো? পদ্মাসেতু দেইখ্যা যাইতে পারলে মইরলেও একটু শান্তি পামু।’ অন্যদিকে মাওয়া ঘাটে স্পিড বোটের প্রতিজন যাত্রী অতিরিক্ত ৩০ টাকা চাঁদা দিচ্ছেন। বরিশাল, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জসহ অন্যান্য জেলার যাত্রীরা ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে স্পিডবোটে নদী পাড়ি দিচ্ছেন। সময় লাগছে ২০ মিনিটেরও কম। অথচ এর বিনিময়ে যাত্রীদের ১৫০ টাকা ভাড়া গুণতে হচ্ছে। এর মধ্যে ১২০ টাকা বোট মালিকের। আর চাঁদাবাজদের জন্য ৩০ টাকা। মাদারীপুরগামী যাত্রী মমিন হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মাসেতু নির্মিত হলে আমাদের ৩০ টাকা অতিরিক্ত চাঁদা দিতে হবে না। বোটের খরচায় ঢাকা-থেকে শিবচরে চলে যাবো। শুধু যে সময় বাঁচবে তাই নয়, স্বপ্নের পদ্মাসেতু বাস্তবায়িত হলে ভাগ্য খুলে যাবে কৃষকদেরও। এ প্রসঙ্গে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার (মাদারীপুর) দাঊদ হোসেন বলেন, জাজিরায় প্রচুর পরিমাণে সবজি, গুটি পেঁয়াজ, বাদাম, মরিচ ও ধনিয়া উৎপাদন হয়। শিবচরে বাদাম, রবি শস্য, সরিষা, সবজি ও গুঁটি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। পদ্মাসেতু বাস্তবায়িত হলে চাষিরা সকালে সবজি তুলে ১০টার মধ্যেই ঢাকার বাজার ধরতে পারবেন। কারণ জাজিরা থেকে ঢাকার পথ মনে হয় না ৪৫ কিলোমিটারের অধিক হবে। তিনি আরও বলেন, মাদারীপুরে প্রচুর পরিমাণে ফল উৎপাদন হয়। অন্যদিকে গোপালগঞ্জের কিছু অংশে উন্নত পদ্ধতিতে আম্রপালি ও মল্লিকা আমের চাষ হচ্ছে। বাগেররহাট ও সাতক্ষীরায় চিংড়ী চাষ কারো অজানা নয়। পদ্মাসেতু হলে চাষিরা কম সময়ে তাদের উৎপাদিত পণ্য ঢাকায় বাজারজাত করতে পারবেন।