কক্সবাজারে আবারো সক্রিয় গরু পাচারকারী চক্র, বিপাকে দেশীয় খামারীরা

জহিরুল ইসলাম, (চকরিয়া) কক্সবাজার : পবিত্র ঈদুল আজহা’কে সামনে রেখে দেশের সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আবারো প্রবেশ করছে মিয়ানমারের গরু। বিজিবি’র তৎপরতায় প্রাণশক্তি হারানো সেই পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে ফের মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। চোরাই পথে আসা অবৈধ চালানের বৈধতা দিচ্ছে হাটবাজারের আড়ত নামধারী কিছু প্রতিষ্ঠান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও সহ একাধিক পয়েন্ট থেকে ট্রাকে ট্রাকে যাচ্ছে মিয়ানমারের গরু। অবৈধভাবে বর্ডার ক্রস করা এসব গরুবাহী ট্রাক আটকের হাত থেকে বাঁচাতে ম্যানেজ করা হচ্ছে নিকটস্থ হাইওয়ে থানা পুলিশের তত্বাবধায়ক। কুরবানীর আগে দেশে অবৈধভাবে পশুর চালান প্রবেশে খামারীরা যেমন বিপাকে, পশু পর্যাপ্ততার পরও দাম না কমায় ভোগান্তিতে ক্রেতা সাধারণ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত দু বছর আগে কক্সবাজারের রামু, ঈদগাঁও, চকরিয়া ও বান্দরবানের লামা, আলীকদমের অন্ততঃ অর্ধ ডজন পয়েন্ট দিয়ে দুষ্কৃতকারী রাজনৈতিক নেতা, জন প্রতিনিধিদের ইন্দনে বিভিন্ন দালাল চক্র শুরু করে অবৈধভাবে গরু পাচার। সীমান্ত পার করা মিয়ানমারের এসব গরু ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে মিয়ানমারের সাথে কোটি কোটি টাকার লেনদেন চললেও রাজস্ব হারায় বাংলাদেশ। দেশের টাকায় অর্থনৈতিক চাঙ্গা হচ্ছিল বাইরের দেশ। অপরদিকে, অবৈধ পাচারের বিপরীতে দেশীয় গরুর চাহিদা কমে যাওয়ায় একপর্যায়ে আগ্রহ হারিয়ে পশু পলন ছেড়ে দিয়েছে অনেক খামারী। অন্যতম উদাহরণ হিসেবে পাওয়া গেছে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা এগ্রো খামার। যোগাযোগ করা হলে খামার পরিচালক রিপন সওদাগর বলেন, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও মিয়ানমারের গরুর পর্যাপ্ততা তার ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার অন্যতম কারণ। অভিজ্ঞদের মতে, মিয়ানমার থেকে দেশে আসা অনেক গরু পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে এসব গরুকে পুশিং করা হয় ডেক্সামিথাসন জাতীয় ইনজেকশন। এতে মানুষের শারীরিক ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে। এসব পরিস্থিতি জানতে পেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের ক্ষুব্ধ অনুভূতি লক্ষ্য করা যায়। অবৈধভাবে গরু পাচার সম্পর্কে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচরণার একপর্যায়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠে সর্বত্রে। ঠিক এমনই সময় রুখে দাঁড়ায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। দেশে এই অবৈধ পাচার ঠেকাতে শুরু হয় বিজিবি’র তৎপরতা। জব্দ করা হয় ডজনে-ডজনে মিয়ানমারের গরু। আটক হয় অপরাধী চক্রের সদস্যরা। সহিংসতার ঘটনায় গুলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে অহরহ। এরপরও দিবারাত্রি শ্বাসরুদ্ধকর চিরুনী অভিযানে পিছু হটে পাচারকারী চক্র। একপর্যায়ে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের আসে অবৈধ গরু পাচার। কিন্তু দু-তিন মাস পর সম্প্রতি ফের সক্রিয় হচ্ছে সে-ই অপরাধী চক্রের সদস্যরা। আবারো চলছে অবৈধভাবে মিয়ানমারের গরু পাচার কার্যক্রম। সরেজমিনে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও বাজারে গড়ে তোলা হয়েছে গরুর আড়ত নামের প্রতিষ্ঠান। গভীর রাতেও মিয়ানমারের গরু পাচারের প্রমাণসহ দৃশ্য চোখে পড়েছে। সেখানে গরু বিক্রির নামে রশিদের মাধ্যমে বৈধতা দিচ্ছে সীমান্ত পার করা এসব মিয়ানমারের গরু। এবিষয়ে জানতে ঈদগাঁও গরু বাজারের আড়ত ম্যানেজার ফিরোজ আহমেদের মুঠোফোনে ৫ জুন রাত ৮টা ৫৩ মিনিটে যোগাযোগ চেষ্টা করলে ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। অবৈধভাবে সীমান্ত করা গরুর চালান মহাসড়ক দিয়ে পাচারের নির্দেশনা আছে কিনা জানতে মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ মোজাম্মেল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে হাট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে জানিয়ে ফোন কেটে দেন। হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোঃ খাইরুল আলম এবিষয়ে বলেন, অবৈধভাবে গরু পাচার বন্ধ করার দায়িত্ব বিজিবির। এরপরও সুনির্দিষ্ট তত্ত্বের ভিত্তিতে হাইওয়ে পুলিশ তৎপরতা চালাতে পারে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে জানতে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি-১১ সিও’র মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *