চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, পাইলট নিহত
চট্টগ্রাম রিপোর্টার: চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ (৩২) নামে এক পাইলট নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পতেঙ্গা বোট ক্লাব এলাকায় কর্ণফুলী নদীর মোহনায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাতে নদীর তলদেশ থেকে বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমান উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী। নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সকালে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ইয়াক-১৩০ উড্ডয়ন করে। একপর্যায়ে বিমানটির পেছনের দিকে আগুন ধরে যায়। এ সময় দুই পাইলট প্যারাসুটের মাধ্যমে অবতরণ করেন। ওই ঘটনায় আহত উইং কমান্ডার সুহান বিমান বাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটির মেডিকেল স্কোয়াড্রনে চিকিৎসাধীন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাইলট জাওয়াদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নানও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে বিমান বাহিনী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ জানান, গতকাল সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়ে। বিমানের পেছনের অংশে আগুন ধরে যায়। পরে সেটি চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের কাছে কর্ণফুলী নদীতে বিধ্বস্ত হয়ে তলিয়ে যায় বলে জানান চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা। তিনি বলেন, বিমানের পাইলট ও কো-পাইলট প্যারাসুট দিয়ে নেমে আসেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। দুর্ঘটনায় মৃত পাইলট জাওয়াদের স্ত্রী, এক কন্যা, এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) বিকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিমান বাহিনীর একটি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গতকাল আনুমানিক সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রামস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক থেকে উড্ডয়নের পর প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার সময় কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
দুর্ঘটনার পর পাইলট উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খাঁন এবং স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ জরুরি প্যারাসুট দিয়ে বিমান থেকে নদীতে অবতরণ করেন। দুজন বৈমানিককে বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল এবং স্থানীয় জেলেদের সম্মিলিত চেষ্টায় উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিএনএস পতেঙ্গায় নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আইএসপিআর আরও জানায়, স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ২০১০ সালে বাংলাদেশ এয়ারফোর্স একাডেমিতে যোগ দেন এবং ২০১১ সালের ডিসেম্বরে পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন পান। ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর’স স্কুল অব বিএএফে স্টাফ ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন তিনি। পেশাজীবনে কৃতিত্বের জন্য ‘সোর্ড অব অনার’ পেয়েছেন আসিম জাওয়াদ। ডিআর কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। দুর্ঘটনায় কবলিত রাশিয়ার তৈরি ইয়াক ১৩০-কে বলা হয় অ্যাডভান্সড জেট প্রশিক্ষণ বিমান। এর মাধ্যমে চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্মের জঙ্গিবিমানের প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। তা ছাড়া হালকা জঙ্গিবিমান এবং গোয়েন্দা বিমান হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। বিমান বাহিনীর বহরে এ ধরনের ডজনখানেক উড়োজাহাজ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, বিমান দুর্ঘটনার পর কর্ণফুলী নদীর মোহনায় দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে ঘণ্টাখানেক জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। সাড়ে ১১টার পর আবার স্বাভাবিক হয়েছে।