সাভারের পাড়া-মহল্লায় শতাধিক কিশোর গ্যাং
ডেস্ক রিপোর্ট: স্থানীয় নেতাকর্মীরা দুই দশক আগেও নিজেদের শক্তি ও অবস্থান জানান দিতে এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দিতেন। তখন গুলি করে হত্যার প্রবণতা ছিল সর্বোচ্চ। এসব ঘটনায় অনেক নেতাকর্মীকে আইনি জটিলতায় পড়তে হয়।তাই জটিলতা এড়াতে তারা এখন পাড়া-মহল্লায় তৈরি করেছেন কিশোর গ্যাং। বিভিন্ন অনৈতিক স্বার্থ হাসিলে তারা এদের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছেন। কারণ, কিশোর অপরাধে আইনের দিক থেকে অনেকটাই ছাড় পাওয়া যায়। এজন্য এখন নেতাকর্মীরা কিশোরদের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, জমি দখল, ডিস ও নেট ব্যবসা, ছিনতাই, অপহরণ, মারামারি, অস্ত্রবাজি ও উত্ত্যক্তসহ খুনের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছেন। এদের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতাই সমাজে কিশোর অপরাধ পর্যায়ক্রমে বেড়ে চলেছে বলে যুগান্তরকে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক সামসুল আলম সেলিম।গত এক মাসে সাভারে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে ৪টি খুন হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সাভার ও আশুলিয়ায় বিভিন্ন নামে অন্তত শতাধিক কিশোর গ্যাং রয়েছে। এসব গ্যাংয়ে স্কুল পড়ুয়া ও সদ্য কলেজে পা দেওয়া ছাত্রদের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া ১৮-২৫ বছর বয়সি তরুণও এসব গ্যাংয়ে রয়েছে। শতাধিক গ্যাংয়ে সদস্য রয়েছে ২ হাজারের বেশি।
১৬ এপ্রিল রাতে চাঁদা উত্তোলনে বাঁধা দেয় সাভার পৌর কামাল গার্মেন্টস এলাকার বাসিন্দা রিফাত। এ কারণে কিশোর গ্যাং লিডার হৃদয়ের সহযোগী সোহাগ, রিপন ও জাহিদ রিফাতকে ছুরিকাঘাত করে। রিফাতের চিৎকারে স্থানীয় তারেক (২২), সাগর (৪০) ও রাশেদ (৩০) এগিয়ে এলে তাদেরকেও ছুরিকাঘাত করে তারা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা গুরুতর আহতাবস্থায় চার জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোবাইল হারানোর দ্বন্দ্বে ২০২৩ সালের ৯ জুলাই সাভার সুপার ক্লিনিকের সামনে কিশোর গ্যাং হৃদয় গ্রুপের সদস্যরা আকাশ মাহমুদ নামের এক তরুণকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় র্যাব ওই গ্রুপের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করে। তারা সবাই সাভার উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের অনুসারী।
আতিক সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠেছে। উঠতি বয়সি ছেলেদের দলে ঠাঁই দেন সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন টিপু ও সাভার সদর ইউনিয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম রুবেল।
মূলত এলাকায় চাঁদাবাজি, জমি দখল, ডিস ও নেট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ছিনতাই, অপহরণ, মারামারি, অস্ত্রবাজি, উত্ত্যক্তসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে আধিপত্য বজায় রাখতে তারা কিশোর গ্যাং গড়ে তোলেন। চাঁদাবাজির একটি অংশও ব্যয় হয় গ্যাংয়ের সদস্যের পেছনে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, সাভার উপজেলায় দুই ছাত্রলীগ নেতা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও এক কাউন্সিলরের মৌন সমর্থনে পাড়া-মহল্লায় শতাধিক কিশোর গ্যাং তৈরি হয়েছে। এসব গ্যাংয়ের হানাহানিতে প্রায়ই ঘটছে খুনের ঘটনা। এতে আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে আতিকের রাজনীতির হাতেখড়ি সাভার উপজেলার চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের মাধ্যমে। চেয়ারম্যানের মন জয় করতে সাভারের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় আতিক গড়ে তোলেন অন্তত শতাধিক কিশোর গ্যাং গ্রুপ। এসব গ্রুপে রয়েছে অন্তত ২ হাজারের বেশি নিয়মিত সদস্য। এদের বেশির ভাগই স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া। আতিক তাদেরকে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি ও অর্থের বিনিময়ে মঞ্জুরুল আলম রাজীবের রাজনৈতিক বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে সম্পৃক্ত করেন। আর এসব বড় ভাইদের ছত্র ছায়ায় থেকে কিশোররা খুনের মতো অপরাধ করতেও দ্বিধা করে না।সাভার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডে কিশোর গ্যাং রয়েছে ৪টি। এই গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে রাজীব হোসেন ওরফে কানকাটা রাজীব, তানজিল নিরব ওরফে ডিজে তানজিল, পীরচান ইসলাম রানা ও মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগি মাসুম। ৪ গ্রুপে রয়েছে অন্তত ৭ শতাধিক সদস্য।