শেরপুরে দাফনের ২৪ দিন পর কবর থেকে কৃষকের লাশ উত্তোলন
জাহাঙ্গীর হোসেন, শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নকলায় দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে দাফনের ২৪ দিন পর মফিজ উদ্দিন (৫৭) নামে এক কৃষকের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করেছে নকলা থানা পুলিশ।
২৪ মার্চ রবিবার দুপুরে গণপদ্দী ইউনিয়নের পশ্চিম চিথলিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে মফিজের লাশ উত্তোলন করা হয়।
মফিজ পশ্চিম চিথলিয়া গ্রামের মৃত জমশেদ আলীর পুত্র। তিনি পেশায় কৃষক ছিলেন।
আদালতে দায়ের করা এজাহার, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায় পশ্চিম চিথলিয়া গ্রামের মফিজের পরিবারের সাথে তাঁর সহোদরা নূর উদ্দিনের (৬০) পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে জমাজমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ২৫/১১/২০২৩ ইং তারিখে দিনের বেলায় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে নূর উদ্দিনের ছেলে নূর আলম (৩২) বাদী হয়ে মফিজসহ ১০ জনকে আসামী করে শেরপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। আদালত অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নকলা থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। বর্তমানে ওই মামলার সকল আসামী জামিনে মুক্ত আছেন বলে জানিয়েছে নকলা থানা পুলিশ।
অপরদিকে মামলার তদন্ত কাজ চলাকালে গত ২৯/০২/২০২৪ ইং তারিখে মফিজ তাঁর নিজ বাড়িতে মারা যান। পরবর্তীতে মফিজের পরিবার মফিজের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে।
কিন্তু ২৫/১১/২০২৩ ইং তারিখের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে পরবর্তীতে অসুস্থ্যতাজনিত কারণে মফিজের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে মফিজের স্ত্রী শিউলী বেগম (৫০) বাদী হয়ে ০৭/০৩/২০২৪ ইং তারিখে শেরপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নূর আলমসহ ৫ জনকে আসামী করে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। আদালত ওই অভিযোগটিও এফআইআরের জন্য নকলা থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।
অভিযোগটি এফআইআরের পর থেকে নূর আলমসহ সকল আসামী পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারি পরিদর্শক (এসআই) আশরাউল আলম। তিনি আরও জানান আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং মামলার তদন্ত কাজের সুবিধার্থে কিভাবে মফিজের মৃত্যু হয়েছে তাঁর কারণ জানতে আমরা মফিজের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নেই।
মামলার বাদী মফিজের স্ত্রী শিউলী বেগম জানান ঘটনার দিন সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে নূর উদ্দিন ও তাঁ ছেলে নূর আলমসহ তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আমিসহ আমার স্বামী মফিজ ও পরিবারের অন্য দুই সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও কল্পনা বেগমকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করে। পরবর্তীতে মফিজের শারিরীক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। ইউপি চেয়ারম্যান শামছুর রহমান আবুল উভয় পক্ষের মধ্যে চলমান বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেওয়ার কথা বলে আমার স্বামী মফিজকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে দেয়নি এবং মামলা করতেও নিষেধ করেন।
স্থানীয় মিজানুর রহমান (৫৮) জানান দু’পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষে মফিজ গুরুতর আহত হয়েছিল। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান শামছুর রহমান আবুল আপসরফার কথা বলে মফিজকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে দেয়নি, মামলাও করতে দেয়নি।
এব্যাপারে কথা বলার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান শামছুর রহমান আবুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কাদের মিয়া জানান ২৫/১১/২০২৩ ইং তারিখে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মফিজের পরিবার ও তাঁর সহোদরা নূরের পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মফিজের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কিংবা আদালতে কোন লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়নি। কিন্তু মফিজের মৃত্যুর ৭ দিন পর ২৫/১১/২০২৩ ইং তারিখের জমিজমা নিয়ে দু’পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে পরবর্তীতে মফিজের মৃত্যু হয়েছে বলে মফিজের স্ত্রী আদালতে লিখিত অভিযোগ করেছেন। আদালত অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি মামলা রেকর্ড করে মফিজের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাবুল আরিফ, ওসি (তদন্ত) আবুল কাশেম, বাদীর পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে কবর থেকে মফিজের লাশ উত্তোলন করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছি এবং লাশ ময়না তদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া।