ছেলে-মেয়ের খোঁজ নিলেন সালাহ উদ্দিন
শিলং: স্বামীর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় দেখা করলেন হাসিনা আহমদ। মঙ্গলবার দুপুরে আসামিদের ওয়ার্ডে সাক্ষাৎ হয় স্বামী সালাহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। ছেলেমেয়ে ও পারিবারিক নানান বিষয় নিয়েই কথা হয় তাদের মধ্যে।
সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে স্বামীর সঙ্গে প্রথমবার সাক্ষাৎ করেন হাসিনা আহমদ। ৯টা পর্যন্ত হাসপাতালে ছিলেন তিনি। গত আড়াই মাসের মধ্যে সেটি ছিল প্রথম সাক্ষাৎ।
মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের ওয়ার্ডে স্বামীর সঙ্গে কথা বলার পর হাসিনা আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার (সালাহ উদ্দিন) শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। দুই থেকে তিন মিনিটের বেশি তিনি দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। তার শরীর কাঁপতে থাকে। তার হার্টের সমস্যা আছে। কিডনির অবস্থাও ভালো না। তাই জরুরি ভিত্তিতে তার চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে এই চিকিৎসা তিনি করাতে চান তৃতীয় কোনো দেশে বিশেষ করে সিঙ্গাপুরে। ’
এসময় সাংবাদিকরা তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন। ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকটা উন্নত। বাংলাদেশের অনেক লোক ভারতে হার্ট ও কিডনির চিকিৎসা করাতে আসেন। তা হলে সালাহ উদ্দিনকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করাতে হবে কেন?
জবাবে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে সালাহ উদ্দিনের সব চিকিৎসা চলছে সিঙ্গাপুরে। তিনবার তার হার্টে অস্ত্রোপচার হয়েছে। রিং পরানো হয়েছে। তিনি সিঙ্গাপুরেই চিকিৎসা নিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন।’
তবে চাইলেই তো আর সালাহ উদ্দিনকে তৃতীয় কোনো দেশে নেয়া যাবে না। রয়েছে আইনের জটিলতা। ফরেনার অ্যাক্ট লঙ্ঘন করেছেন বিএনপির এই নেতা। এটি অবৈধ অনুপ্রবেশ। গুরুতর অপরাধ। এর একটা সুরাহা হতে হবে।
এ ব্যাপারে হাসিনা আহমেদ বলেছেন, ‘তিনি অপরাধ বিষয়ক একজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করেই পদক্ষেপ নেবেন।’
জানা গেছে, আজ হাসপাতালে যাওয়ার আগে হাসিনা আহমদ যান শিলংয়ের লাশুম এলাকায় অপরাধ বিষয়ক সিনিয়র আইনজীবী এসপি মাহান্তের অফিসে। কিন্তু তিনি তখন আদালতে থাকায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি। জুনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বললেও তারা তাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারেননি।
হাসিনা আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার বিকেলেই তিনি এসপি মাহান্তের সঙ্গে কথা বলবেন। মোটকথা আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই তিনি স্বামীকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যেতে চান।
দুইমাস ‘নিখোঁজ’ থাকার পর ১১ মে শিলংয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদের খোঁজ পাওয়া যায়। সেখান থেকে তিনি স্ত্রী হাসিনা আহমদকে ফোন করেন। এর মধ্যদিয়ে সালাহউদ্দিনের নিখোঁজ হওয়ার অবসান ঘটে। কিন্তু তিনি কিভাবে শিলং গেলেন তার রহস্য এখন পর্যন্ত উন্মোচিত হয়নি।
রোববার রাতে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে কলকাতা পৌঁছান হাসিনা আহমদ। রাতযাপনের পর সোমবার সেখান থেকে তিনি সকালে রওনা হন শিলংয়ের পথে। সন্ধ্যায় সেখানে পৌঁছান তিনি।
হাসপাতালে সালাহ উদ্দিন তাকে জানান, তিনি স্বেচ্ছায় ভারতে ঢোকেননি, বরঞ্চ তার চোখ–হাত বেঁধে তাকে শিলংয়ে ফেলে দিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
শিলং সিভিল হাসপাতালে বিচারাধীন বন্দীদের বিভাগে চিকিৎসাধীন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। এই হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গোস্বামীর তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি দ্রুত দেশে ফিরতে চান।
সোমবার কিছু মেডিকেল পরীক্ষার পর ডা. গোস্বামী বিবিসি বাংলাকে জানান, সালাহউদ্দিন আহমেদ সুস্থ–স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছেন। তার কথায় কোনো অসংলগ্নতা দেখা যায়নি এবং তার কোন স্মৃতিবিভ্রাট ঘটেছে এমন কোন প্রমাণও দেখা যায়নি।
ডাক্তারী পরীক্ষার পর সালাহ উদ্দিন আহমেদ শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন এমন প্রত্যয়নপত্র পাওয়া গেলেই তাকে আদালতে হাজির করা হবে বলে জানিয়েছে মেঘালয় পুলিশ।