শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আপন ভাগ্নেকে জবাই করে হত্যা। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৬ জন কারাগারে
জাহাঙ্গীর হোসেন, শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আপন ভাগ্নেকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন হত্যার সাথে জড়িত ৩ জন। ২৭ জানুয়ারি শনিবার হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৩ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ২৭ জানুয়ারি শনিবার বিকেলে নালিতাবাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) দিদারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
২৬ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার লিলুখালের পাড় থেকে পুলিশ যোগানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের আপন ভাগ্নে শাহ কামালের (৩৮) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে।
পরে শুক্রবার রাতে নিহত শাহ কামালের মা অছিরন বেগম বাদি হয়ে নালিতাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাতেই নিহতের মামাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যাক্তিরা হলেন নিহতের মামা হাবিবুর রহমান হবি (৫৫) ও তাঁর স্ত্রী আমেলা খাতুন ঝর্না (৪৫), ছেলে সারোয়ার জাহান শান্ত (২৬), ভাই হারেজ আলী (৫০) এবং ভাতিজা মোস্তফা (৩০) ও রাহুল মিয়া (২২)।
শনিবার দুপুরে হাবিবুর রহমান, তার স্ত্রী ও ছেলেসহ ৬ জনকে আদালতে পাঠালে ৩ জন হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। পরে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায় ২০১৮ সনে উপজেলার ভাইটকামারী গ্রামের ফজল মিয়ার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ভাগ্নে শাহ কামাল ৫৫ শতক আবাদি জমি এগ্রিমেন্ট নেন । পরে ২০১৯ সনে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে ফজল মিয়ার পরিবারের ঝগড়া বাধে। তখন হাবিবুর রহমানের ছোড়া গুলিতে ফজল মিয়ার ছেলে ইদ্রিস আলীর হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় হাবিবুর, তাঁর স্ত্রী-সন্তান ও ভাতিজাসহ কয়েজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। তাঁদের সবাই এখন জামিনে রয়েছেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফজল মিয়া এগ্রিমেন্ট দেওয়া জমি বুঝিয়ে দেননি শাহ কামালকে। ৭০ হাজার টাকাও ফেরত দেননি। জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই শাহ কামালের বর্গা নেওয়া জমির টাকা উদ্ধারে তোড়জোড় শুরু করেন হাবিবুর ও তাঁর সহযোগীরা। পরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আপন ভাগ্নেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন হাবিবুর।
পরে হাবিবুর ও তাঁর স্ত্রী ঝর্না এবং হাবিবুরের ভাই হারেজের পরিকল্পনা অনুযায়ী হাবিবুরের ছেলে শান্ত ও তাঁর দুই ভাতিজা মোস্তফা ও রাহুল গত ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে শাহ কামালকে ঘরে ডেকে আনে। পরে ছুড়ি দিয়ে শাহ কামালের গলা কেটে হত্যা নিশ্চিত করে লাশ বস্তায় ভরে পাশ্ববর্তী লিলুখালের পাড়ে ফেলে আসে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শাহ কামাল রাতের খাবার খেয়ে বাড়ি থেকে পাশের বাজারে চা খেতে বের হন। পরে গভীর রাতেও বাড়ি না ফেরায় তাঁর স্ত্রী শেফালি বেগম (৩২) প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে শাহ কামালের খোঁজে বের হন। পরদিন শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে এক যুবক ভাইটকামারী লিলুখালের পাড়ে শাহ কামালের গলাকাটা লাশ দেখতে পান।
পরে জরুরী সেবা ৯৯৯ এ খবর দিলে নালিতাবাড়ী থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শাহ কামালের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নালিতাবাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দিদারুল ইসলাম জানান আসামীদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যায় ব্যবহৃত ছুড়ি, রক্তমাখা নেকড়া, হ্যান্ডস গ্লাভস ও রক্তমাখা এক জোড়া জুতা উদ্ধার করা হয়েছে।